চাকরির মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। ফলে চলেই যেতে হচ্ছে তাকে। নানা মহলে দেন-দরবার করেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পেতে ব্যর্থ হন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) তার শেষ কর্মদিবস। এই জন্য তিনি অফিস থেকে নিজস্ব মালামাল সরিয়ে নেন। সবার কাছ থেকে বিদায়ও নেন।
এদিকে প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছে বেবিচক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গোপনে তদন্ত করে এর সত্যতাও পেয়েছে। তবে বেবিচকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে নানা উপায় বের করার চেষ্টা চালান। এমন কী দুদক থেকে অনাপত্তি নিতে চিঠি পাঠিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।
জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, প্রধান প্রকৌশলীর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ হয়নি। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, দুদকের চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা করছে বেবিচক। পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেলে তাকে দেওয়া হবে, না হলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে বেবিচক। দুর্নীতির মামলা থাকার পরও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে তোড়জোড় করা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে করা আবেদনে হাবিবুর রহমানকে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা আখ্যায়িত করা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আটটি ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাবিবুর রহমানের অবসর ছুটি বাতিল করে এ বছরের ২৩ মার্চ থেকে ২০২৭ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ মহলেও তদবির করা হয়েছে। তারপরও কাজ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস। ২২ মার্চ তার চাকরির মেয়াদ শেষ। ২৩ মার্চ থেকে প্রধান প্রকৌশলীর পদটি খালি হয়ে যাবে। তবে কিছুদিন পর বেবিচকের বোর্ড সভায় নতুন করে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে পারবে।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন আরেক কর্মকর্তা বলেন, আজ তিনি শেষ অফিস করছেন। সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। আমরা যতটুকু জানি হাবিবুর রহমানের পুনরায় নিয়োগের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি মন্ত্রণালয়। গত ৯ মার্চ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তাদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও হাবিবুর রহমানকে দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্রিফ করার চেষ্টা হয়েছে। নানা সমালোচনার পর বাধ্য হয়ে হাবিবুর রহমানের নামে কাটা বিমানের টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হয়। তার পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টাকে বিমানবন্দরে সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্রিফ করেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া।
জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪টি দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক। হাবিবুর রহমানকে সরাতে উচ্চতর আদালতে রিট পর্যন্ত করা হয়েছিল। তারপরও বোর্ড সভায় তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে সিদ্ধান্ত নেয়। এই নিয়ে সমালোচনা ঝড় ওঠে। এছাড়া হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে। টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকার ঘুষ নিয়েও কাজ না দেওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় প্রকৌশল বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদক তদন্ত করে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বেবিচকের যত মেগা প্রকল্প রয়েছে, প্রায় সবগুলোতেই অর্থ-বাণিজ্য করেছেন তিনি।
এর আগে দরপত্রের কাজ পেতে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক ঠিকাদার। কিন্তু তিনি কাজ না পেয়ে অর্থ ফেরত চেয়েছেন। এই নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকে কয়েকমাস ধরে। সব শেষে ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম ডিএমপির দুটি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তাছাড়া দিয়েছেন উকিল নোটিশ।
গত ১২ জানুয়ারি প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে পাঠানো উকিল নোটিশে বলা হয়, হাবিবুর রহমান বেবিচকের পিঅ্যান্ডডি কিউএস সার্কেলে এসই পদে থাকাবস্থায় ৫ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার কথা বলে সিরাজুল ইসলামের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তার মধ্যে ৫ লাখ টাকা উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে দেওয়া হয়। বাকি ৫ লাখ টাকা কাজ দেওয়ার পর পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজ বা টাকা ফেরত না দিয়ে সিরাজুল ইসলামকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন হাবিবুর রহমান। এজন্য থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিসের জবাব না দিলে নিয়মিত মামলা করার কথা বলা হয় নোটিসে।
মন্তব্য করুন