ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলার ফলে নারী ও শিশুসহ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটেছে, যা মানবিক সংকটকে আরও গভীরতর করেছে। ইসরায়েলের এই সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বুধবার (১৯ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের চিফ অ্যাডভাইজার গভ. (হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট) পেইজ থেকে এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন পুনরায় শুরুর তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই হামলার ফলে শিশু ও নারীসহ নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে এবং এই অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সহিংসতার এই নতুন মাত্রা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি গুরুতর অবজ্ঞার শামিল।
বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর অব্যাহত নির্বিচার বিমান হামলার নিন্দা জানায়, যা মানবিক দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং অসহায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।
বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ, সর্বাধিক সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতাগুলোকে সম্মান করার আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, তারা যেন যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করে, বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষা করে এবং গাজার অবরুদ্ধ জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা নিরবচ্ছিন্নভাবে পৌঁছাতে জরুরি ও সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারের প্রতি অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ পূর্ববর্তী সীমান্ত বরাবর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে একটি ব্যাপক, ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে সংলাপ পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেয়, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি ভিত্তিপ্রস্তর। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ক্রমাগত চলমান এই সহিংসতা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে কূটনীতি ও শান্তিপূর্ণ উপায়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনের নীতি, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং শান্তি, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক হামলা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এক ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে গাজা পুনরায় ইসরায়েলের বিমান হামলা ভয়ানক মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং আগামীতেও তাদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন