কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ১০:০৬ এএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ১১:০৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মাগুরার সেই শিশুটির সবশেষ অবস্থা

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত

মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক বিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন। তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনের নেতৃত্বে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন শল্য বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু সার্জন, ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ এবং থোরাসিক সার্জন রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) বোনের শ্বশুরবাড়ি মাগুরা শহরের নান্দুয়ালী এলাকায় বেড়াতে গিয়ে বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৫০)-এর লালসার শিকার হয় শিশুটি। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান।

ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার (০৭ মার্চ) রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তারপর তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়।

বোর্ডের একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকে জানান, শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। গলায় বড় ক্ষত। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শিশুকে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল এবং বুকে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়েছিল। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেছে। বুকের ওপর চাপ দেওয়ায় ফুসফুসের যেসব জায়গায় বাতাস থাকার কথা না, সেসব জায়গায় বাতাস ঢুকে গেছে। রোববার (০৯ মার্চ) সকালে বুকে অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতায় মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে খিঁচুনি হয়েছে।

ওই চিকিৎসক বলেন, শিশুটি এখনো অচেতন। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখন খিঁচুনি নেই। তবে রক্তে সংক্রমণ অনেক বেশি। শিশুটির রক্তচাপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিশুটির অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটির দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবাসহ চারজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রোববার (০৯ মার্চ) রাত ১২টার দিকে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মতিনের আদালতে শুনানি শুরু হয়। পুলিশ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত এক নম্বর আসামি হিটু শেখকে সাতদিন এবং সজীব হোসেন, রাতুল শেখ ও জাবেদা বেগমের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ ছাড়া মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সব বিষয়াদি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে পুলিশ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং বিটিআরসিকে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

সেই সঙ্গে প্রিন্ট মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ভিকটিমের ছবি, নাম প্রকাশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন ও হামিদুল মেসবাহ তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে রিট করলে গতকাল রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব নির্দেশ দেন।

এ সময় আদালত বলেন, যারা ভিকটিমের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে, তাদের আইডেন্টিফাই করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে ধর্ষণের শিকার কোনো ভিকটিমের নাম, ছবিসহ পরিচয় প্রকাশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। নিজের জনপ্রিয়তার জন্য অনেকেই ভিকটিমের ছবি ও নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিচ্ছেন। এই বাজে জনপ্রিয়তার জন্য আইন ভঙ্গ করতে দেওয়া যাবে না। কেউ নিজের স্বার্থের জন্য ছবি প্রকাশ করলে সেটা সহ্য করা হবে না।

এ সময় আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা লিখিত বক্তব্য আবেদন আকারে এনেছেন, এতে ভালো হয়েছে। নয়তো আমাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিতে হতো। মূলত আমাদের (আদালতের) কাজ হলো বার্তা দেওয়া। মানুষকে জানাতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুসারে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর নাম-পরিচয় ও ছবি প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারাটির প্রচারে কাজ করতে হবে।

আদেশ শেষে আদালত মন্তব্য করেন, এতবড় অবিচার-অন্যায়ের বিষয়ে আমাদের বলার কোনো ভাষা নেই। এ ঘটনা হয়তো আমরা থামাতে পারিনি। তবে ঘটনার পরের ঘটনা থামাতে কাজ করতে পারছি। সবাই মিলে কিছু একটা করার চেষ্টা করেছি।

রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে উল্লেখ তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এটি করতে হবে। বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ না হওয়ার অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। বর্তমান আইনে রয়েছে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে কোনো জামিন দেওয়া যাবে না। মাগুরায় শিশুটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এ ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

একই সময়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।

তিনি বলেন, মাগুরার ঘটনায় অভিযুক্ত সবাইকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। একইভাবে যদি দেশের কোথাও নারীর প্রতি সহিংসতা বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে নির্দেশ দিয়েছি। এ পর্যন্ত নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি। নারীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ঘরে-বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। এতে যারা বাধা দিতে আসবে, সহিংসতা করতে আসবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ববিতে সমাবেশ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলামের পদত্যাগ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

সিটি ব্যাংকে নিয়োগ, কোনো বয়সসীমা নেই 

নিয়োগ দিচ্ছে কারিতাস বাংলাদেশ, বেতন ১ লাখ ২০ হাজার

ট্রফি জয়ের পর শামির মায়ের পা ছুঁয়ে কোহলির শ্রদ্ধার নিদর্শন

৭ ঘণ্টা পর বনানী সড়কে যান চলাচল শুরু

ট্রফি মঞ্চে পাকিস্তানের প্রতিনিধি না থাকায় শোয়েব আখতারের ক্ষোভ

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

শিগগিরই ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় ঐকমত্য কমিশন

১০

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৬ মামলার চার্জশিট অনুমোদন

১১

রমজানে খেলায় ব্যস্ত শামি, পরে রাখবেন কাজা রোজা

১২

৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে ঐকমত্য কমিশনের চিঠি

১৩

প্রশাসনের কর্তৃত্ব না থাকায় ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে : রিজভী

১৪

জামায়াত নেতাদের মাইক্রোবাসে ডাকাতি

১৫

পুরস্কার বিতরণী থেকে বাদ পিসিবি, আইসিসির সিদ্ধান্তে বিতর্ক

১৬

গরম নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন পূর্বাভাস

১৭

যশোরে স্বামীর বাঁশের আঘাতে স্ত্রী নিহত

১৮

রাজধানীতে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তি

১৯

হাইকোর্টের ৯ নির্দেশনা মেনে করতে হবে অনলাইন ব্যবসা

২০
X