দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো অভিযান চালানোর কারও এখতিয়ার নেই।’ সম্প্রতি অভিযানের নামে বাসাবাড়িতে লুটপাটের প্রেক্ষাপটে এ কথা বললেও বৃহস্পতিবার রাতেই মিরপুর ডিওএইচএস এ একটি বাসায় অভিযান চালিয়েছে ‘ছাত্ররা’। শেখ তারেক জামিল তাজের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। তিনি নিজেকে পল্লবী থানা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক পরিচয় দেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের খোঁজে বাসাটিতে তল্লাশি চালায় তাজের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল।
জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল পেয়ে ওই বাসায় যান পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন আহমেদ। তিনি কালবেলাকে বলেন, বাসাটি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেলের। আমি যাওয়ার আগেই ছাত্ররা বাসায় ঢুকে। তারা কাউকে পায়নি। কাউকে না পাওয়ায় আমি আমার উর্ধ্বতনদের জানাই। এবং ওসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রদের চলে যেতে বলি। কয়েকজনকে আমি সঙ্গে করে নিয়ে আসি। কিন্তু তাজসহ আরো কয়েকজন ‘কাজ আছে’ বলে ওখানে থেকে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, রাত ৯টার আগে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক ওই বাসায় যায়। বাড়ির মালিকসহ ডিওএইচএস পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ‘বাজে আচরণ’ করে ‘জোরপূর্বক’ বাসার ভিতরে যায় তারা এবং বাসায় তারা তল্লাশী করে। কাউকে না পেলেও তারা বাসাটিতে অবস্থান নিয়ে থাকে। বাসার সামনের সড়কের ছাত্রদের উপস্থিতি ছিল, সঙ্গে অন্যান্য মানুষও জড়ো হয়।
রাত ১টার দিকে তাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় কালবেলা প্রতিবেদকের। তিনি ফোনটি অন্য একজনকে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, উনি বড় ভাই, উপরে ছিলেন। আমি বাসার নিচে ছিলাম। উনার সঙ্গে কথা বলেন।
তাজের ফোনে কথা বলা ওই বড় ভাই বলেন, আমরা অনেক খুঁজে বাসাটা বের করেছি। প্রথমে মালিক আমাদের সহযোগীতা করেনি। পরে অবশ্য আমরা বাসায় ঢুকতে পেরেছি। তারা অস্বীকার করে বাসায় কেউ নাই। ড্রয়িং রুমে বসে, বাসার সবাইকে ডাকতে বলি। তারা জানায়, মোতালেব ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি, বাসায় নেই। এরপর পুলিশ আসে। ততক্ষণে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দারাও চলে আসে। বাসায় কাউকে না পেয়ে আমাদের একটি টিম ইউনাইটেড হাসপাতালে যায়। সেখানে গিয়েও মোতালেবকে পাওয়া যায়নি। জানতে পেরেছি, আমরা হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সাবেক এমপি মোতালেব হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়।
কথিত বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলা শেষে তাজের সঙ্গে আবার কথা হয় প্রতিবেদকের। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো অভিযান চালানোর কারও এখতিয়ার নেই। আপনারা কেন অভিযান চালাতে গিয়েছিলেন। জবাবে তাজ বলেন, এটা আপনারা ভুল বুঝছেন। আমরা কোনো অভিযান চালাইনি। পুলিশকে জানিয়েই গিয়েছিলাম। তবে পুলিশ আমাদের পরে আসছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তর পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে সাংবাদিকরা বাসা-বাড়িতে হুট করে অভিযানের নামে লুটপাটের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কোনো অভিযান চালানোর কারও এখতিয়ার নেই।
মব তৈরি করে অপরাধের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি দ্বিমত করব না, হচ্ছে। তবে যেখানে হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। পুলিশের ওপরেও হামলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণ এমন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেলে অনেক সময় কিন্তু সমস্যা হয়। বাহিনী দিয়ে তো সবসময় কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করা যায় না।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তৎপর আছে। যে জায়গায় মব জাস্টিস হচ্ছে তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা (মব জাস্টিস) না ঘটে সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন