শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিদিনই প্রকাশ্য আদালতে এসব আসামির দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা সম্পদ জব্দ বা অবরুদ্ধ করা হচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট তকমা পাওয়া সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা এখনো জিআর শাখায় কর্মরত থাকায় এই সুবিধা পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। প্রকাশ্য আদালতে এ সম্পদ জব্দের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব। আদেশ হওয়ার পর সংবাদ প্রকাশের জন্য বিস্তারিত তথ্য চাইতে কয়েকজন সাংবাদিক ঢাকার আদালতে অবস্থিত দুদকের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় যান।
এ সময় সংস্থাটির আদালত পরিদর্শক আমির হোসেনের কাছে তথ্য চাইলে তিনি বিষয়টি লুকিয়ে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য থাকলেও দিতে পারব না। কিছুদিন আগে ট্রেনিং থেকে এসেছি। সেখানে সাংবাদিকদের তথ্য না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।’
যদিও পরবর্তীতে পুতুলের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
এদিকে বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ও আইনজীবীরা বলছেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তারা আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের কোনো তথ্য দিতে চান না। ফলে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব পদক্ষেপের সংবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশবাসী।
তবে কি সরকারের সাফল্য গোপন করতেই দুদক জিআর শাখার কর্মকর্তারা তথ্য গোপন করছেন কি না, এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। অন্যদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যখন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের বা চার্জশিট দাখিল করত, তার তথ্য স্বাভাবিকভাবেই সব সাংবাদিককে সরবরাহ করা হতো। তবে তাদের যত আপত্তি আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রীসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মামলা, সম্পদ জব্দ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদির তথ্য দিতে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, দুর্নীতিবাজদের যেসব সম্পদ জব্দ হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা কতগুলো হলো, এসব তথ্য না দেওয়ার কারণ, এখন যারা দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর আছেন, তারা তো স্বৈরাচারের দোসর। এ জন্য দুর্নীতিবাজদের তথ্য দিতে চায় না। শিগগির দুদকে নতুন পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, দুদকের জিআর শাখার উচিত সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়া, যাতে দেশবাসী এসব দুর্নীতিবাজের সম্পত্তির খবর জানতে পারে।
দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেনের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম ও কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই ফোন ধরেননি।
মন্তব্য করুন