সাধারণত পুলিশ পদক দেওয়া হয় পুলিশ সপ্তাহে। ওই সময়ে পেশাগত ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ, সাহসিকতা ও নানা সেবামূলক কাজের জন্য দেওয়া হয় দুই ক্যাটাগরির পদক। তবে এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা।
চলতি বছর পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই এবার পদক পেলেন মেসবাহ উদ্দিন নামে পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। ‘সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ’ তাকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) দেওয়া হয়।
সোমবার (৩ মার্চ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
পদক পাওয়া মেসবাহ রাজধানীর ভাটারা থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত। তার পদক পাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভাটারা থানার জে ব্লক এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোবারক হোসেন নাফিজ নামক এক চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীকে আটক করেছিলেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। ওই সময়ে মোবারক গ্রুপের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার চোখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। এরপরও তিনি ওই সন্ত্রাসীকে ঝাপটে ধরে আটকে রাখেন।
সাধারণত পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের বিগত এক বছরের কাজের মূল্যায়ন করে পদক দেওয়া হয়। যা বাংলাদেশ পুলিশ পদক- বিপিএম এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক বা পিপিএম নামে পরিচিত। সরকার প্রধান এ পদক পরিয়ে দেন। পদকপ্রাপ্তরা চাকরিকালীন সময়ে বেতনের সঙ্গে সম্মানী ভাতাও পেয়ে থাকেন।
তবে অসময়ে এএসআই মেসবাহর পদক পাওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, পুলিশের ওই সদস্যের বীরত্ব ও সাহসিকতা বিবেচনায় পুলিশের পক্ষ থেকে এখনই পদক দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ আসে। এ সময়ে দিলে পুলিশ সদস্যের মনোবল চাঙ্গা থাকবে বলে অনুরোধ করা হয়। বিষয়টি যাচাই করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
১৫ জানুয়ারির ঘটনায় পরের দিন ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ভাটারা থানার টহল টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে- ভাটারা এলাকার ওয়ারেন্টভুক্ত চিহ্নিত চাঁদাবাজ মোবারক হোসেন নাফিজ তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ভাটারা থানাধীন জে-ব্লক বারিধারা রোড নং ১/এ ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান থেকে ভয় দেখিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করছে।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে এএসআই মো. মেসবাহ উদ্দিনসহ থানার টহল টিম দ্রুত সেখানে পৌঁছায়। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাকালে নাফিজ এএসআই মেসবাহ উদ্দিনকে সুইচ গিয়ার চাকু ও হাতে থাকা স্টিলের কাটা চামচ দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তিনি বাম চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে অনড় থেকে তিনি চাঁদাবাজ নাফিজকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
ওই সময় নাফিজের সহযোগী ৪ থেকে ৫ জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের সময় নাফিজের কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, একটি স্টিলের রক্তমাখা কাটা চামচ, বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা এক হাজার ৭৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আহত এএসআই মেসবাহ উদ্দিনকে প্রথমে বারিধারার স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে দেখতে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
আইজিপি এএসআই মেসবাহ উদ্দিনের এ সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাকে বিপিএম (সাহসিকতা) পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ডিএমপি কমিশনার সাহসিকতাপূর্ণ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন।
মন্তব্য করুন