কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১২ পিএম
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘সংস্কার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রবিধান সংযুক্ত করা হবে’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি : সংগৃহীত
অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি : সংগৃহীত

সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রবিধান সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে তার কাজের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রবিধান সংযুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করে তোলার ওপর। বিগত সরকারের সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চরমভাবে দুর্বল করে ফেলা হয়, যা প্রধানমন্ত্রীকে কর্তৃত্ববাদী হওয়ার পথ প্রশস্ত করে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ধারার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য সংবিধানে বিশেষ অনুচ্ছেদ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থাকে কেউ কেউ ‘বিপ্লব’ বলেন। আদতে এটা বিপ্লব ছিল না। বিপ্লব হলে বিভিন্ন কমিশন গঠন করার দরকার হতো না। সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে তারা কতটুকু গ্রহণ করবে।

এ সময় সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, অতীতের ক্ষমতার চর্চা ছিল অর্থের ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। আদর্শের চর্চার প্রভাব খুব একটা ছিল না। জাতীয় সংসদের প্রধান থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত সবাইকে এ ধারায় চলতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ চলে গেলেও সেই টাকার প্রভাবের শূন্যতা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। দাবি আদায় করতে লোক জড়ো করা এবং সহিংসতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে।

আলোচনায় অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, সবাই সংস্কার চান। তবে কী সংস্কার চান, তা সুস্পষ্ট করা উচিত। সংস্কার কেবল আইনের পরিবর্তনের মধ্যে আটকে থাকলে হবে না। আইন অনেক আছে। সমস্যা রাজনৈতিক চর্চার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেকগুলো সংস্কারের জন্য কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেক সংস্কার প্রস্তাবও এসেছে। তবে সংস্কার প্রস্তাবের অনেকগুলো আইন পরিবর্তনের জন্য। সত্যিকার অর্থে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাইলে জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল ভূমিকা রাখতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক চর্চার পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সরকার ব্যবস্থাকেও রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার চর্চাও দেখা গেছে। প্রতিবছর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবে- দিন বদলের কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কীভাবে মানুষ এটা বিশ্বাস করবে, রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসছে, সেই প্রতিশ্রুতি রাখবে।

এ সময় সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, বিগত সরকারের সময়ও অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই কথা শোনার বা শুনে তা আমলে নিয়ে কাজ করা হয়নি। সংবিধান সংশোধনের কথা হচ্ছে। এটা করতে হলে তা কীভাবে যুগোপযোগী হয়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।

বক্তারা বলেন, এখন কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না। তাদের মনে রাখা উচিত, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল ক্ষমতার পালাবদলের জন্য হয়নি। এই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হলো সংস্কার এবং নির্বাচন দুটিই হতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো কেবল ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করেছে। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। এ ধারার আমূল পরিবর্তন করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তেলাপোকা-কৃমি-কেঁচোতে আক্রান্ত : ব্যারিস্টার ফুয়াদ 

নারী বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে না পাকিস্তান

‘হাসিনা-কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে’

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি

আনন্দ-উল্লাসে আবুধাবিতে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

জ্বালানি খাতে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ করেছে সরকার

নারী পোশাক শ্রমিককে গলাকেটে হত্যা, স্বামী পলাতক

খুলনায় আ.লী‌গের ঝটিকা মিছিল, নেতাকর্মীদের খুঁজছে পুলিশ

মানুষের চোখে কখনো দেখা যায়নি এই রং, দাবি বিজ্ঞানীদের

সিলেটে টেস্ট / প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ভালো শুরু, তবে বৃষ্টির হানা

১০

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি এখন জিয়া মঞ্চের সভাপতি

১১

তাহলে কি ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আনচেলত্তি?

১২

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বিএনপি

১৩

এখনো খোঁজ মেলেনি অপহৃত সেই ৫ শিক্ষার্থীর

১৪

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে হঠাৎ ঘোড়া

১৫

ঝুটবোঝাই চলন্ত ট্রাকে আগুন

১৬

ট্রাইব্যুনালে সালমান, আনিসুল, দীপু মনি, পলকসহ ১৯ জন

১৭

বড় ভাইয়ের লোকজনের ধাওয়ায় পালিয়েও বাঁচতে পারল না ছোট ভাই

১৮

বিয়ের আসরে হবু শাশুড়িকে দেখে পালালেন বর

১৯

চট্টগ্রামে অটোরিকশায় পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, দগ্ধ ২

২০
X