২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন হবে আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ বছর থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। তবে এ দিনে থাকবে না সরকারি ছুটি। শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের মাধ্যমে সেনাসদস্যদের আত্মত্যাগকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, আজকেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণলায় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রায়হানা ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রতিরক্ষা ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা পরিবারের সদস্যরা। ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার পাশাপাশি বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তারা।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান কালবেলাকে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমরা শহীদ পরিবাররা দুটি জিনিস চেয়ে এসেছি—এক হচ্ছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখ উন্মোচন করে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং আরেক হচ্ছে প্রাণ হারানো সেনা কর্মকর্তাদের সম্মানে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা। সরকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দিলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করব যে, এত বছর সংগ্রাম করে আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা অর্ধেক যুদ্ধ জিতে গেছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক অন্ধকার ও কলঙ্কময় দিন। পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু বিপথগামী এবং বিদ্রোহী সদস্যের নির্মম হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন বীর সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন শাহাদাতবরণ করেন। এক কাপুরুষোচিত ষড়যন্ত্রে নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও বাংলাদেশ এতজন সেনা কর্মকর্তাকে একসঙ্গে হারায়নি। এই ভয়াবহ ঘটনায় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ গ্রহণকারী দেশের সুরক্ষা কবচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হারায় তার মেধাবী ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের, যা সমগ্র সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ দিনটি শুধু বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নয় বরং পুরো জাতির জন্য শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক আপামর জনসাধারণও এ কালো দিনটিতে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শোক পালন করে আসছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রায়হানা ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, এই হৃদয়বিদারক এবং শোকাবহ দিনটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা সময়ের চাহিদা। প্রতি বছর দিনটি যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলে সেনাসদস্যদের আত্মত্যাগকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যা শহীদ পরিবারগুলোর অন্তরে সান্ত্বনাবোধ তৈরি করবে এই দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও আত্মত্যাগের মানসিকতা জাগ্রত করবে। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে সেনাবাহিনীর অবদান এবং আত্মত্যাগ সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে, এই দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের মাধ্যমে সর্বস্তরের সেনাসদস্যদের মধ্যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও পেশাগত দায়িত্বের প্রতি আরও অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের আত্মত্যাগ থেকে শক্তি নিয়ে সেনাসদস্যরা জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালন করা, ওই ঘটনায় শাহাদাত বরণকারী সেনা সদস্যদের ‘শহীদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং শাহাদাতবরণকারী সেনা সদস্যদের নামের পূর্বে ‘শহীদ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালন করার অনুমোদন দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন