বাসস
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এখনো মাথায় ৯টি গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন আলাউদ্দিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত মো. আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী-সন্তান। ছবি : বাসস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত মো. আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী-সন্তান। ছবি : বাসস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনে দাবি আদায়ের বিরামহীন মিছিলে হাজারো জনতার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন টগবগে যুবক আলাউদ্দিনও। ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কচুয়াখালী এলাকার ৩২ বছর বয়সী যুবক মো. আলাউদ্দিন।

বিগত দুই বছর ধরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন তিনি। লেগুনা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এ রোজগার দিয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সব কিছু ভালোই চলছিল তার। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের ছোড়া ৩৫টি ছররা গুলিবিদ্ধ হয় আলাউদ্দিনের শরীরে। এর মধ্যে মাথায়ই ঢুকেছে ১১টি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করে ২৬টি গুলি বের করতে পারলেও এখনও মাথার ভেতর রয়ে গেছে আরও ৯টি গুলি। মাথার ভেতর থাকা এতগুলো গুলি নিয়ে চরম যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন আলাউদ্দিন।

তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো ১৯ জুলাই লেগুনা চালানোর উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হই। তখন রাজধানী ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে উত্তাল। তবু পেটের তাগিদে বের হই। বের হয়ে দেখি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ শুধু শুধু নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলছে। তাই নিজেকে আর সামলাতে পারিনি, নিজেও আন্দোলনে শামিল হয়ে যাই।

তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরের আল্লাহ্ করিম মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অংশ নিয়ে পুলিশ বক্সের সামনে যাই। তবে সেখানে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে হিংস্র পুলিশ। আমার মাথা, বুকে ও কাঁধে বিদ্ধ হয় পুলিশের ছোড়া ৩৫টি ছররা গুলি। এর মধ্যে ১১টি গুলিই মাথায় ঢুকে যায়। এরপর অপারেশনের মাধ্যমে কয়েকটি গুলি বের করতে পারলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে মাথায় বিদ্ধ অন্য গুলিগুলো বের করতে পারিনি।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে গেলে মাথার ভেতরের দুটি গুলি বের করেন চিকিৎসক। বাকি ৯টি গুলি বের করলে সমস্যা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় চিকিৎসক সেগুলো আর বের করেননি।

সেই চিকিৎসকের কথায় বুঝতে পেরেছি, যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এই গুলি মাথায় নিয়েই থাকতে হবে। তবে গুলি থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই হুটহাট মাথায় তীব্র ব্যথা হয়, মারাত্মক যন্ত্রণায় ভুগী। ওই ব্যথা সহ্য করতে পারি না। শুনেছি আন্দোলনে গিয়ে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে আমি এখন পর্যন্ত এক পয়সাও পাইনি।

আলাউদ্দিন আরও বলেন, আমি অনেক অসহায়। কারণ, ছোটবেলায়ই বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর নানুর কাছে বড় হয়েছি। আরেক ভাইসহ আমাদের নিয়ে নানু অনেক কষ্ট করেছেন। গ্রামে যেখানে থাকি সেটা নানুরই জমি। নানুর সম্পত্তি বলতে ওই ৬ শতাংশ জমিটুকুই। সেই জমির অংশীদার পাঁচজন। এখন হয়তো নানু বেঁচে আছেন বলে কেউ কিছু বলছেন না। নানুর মৃত্যুর পর হয়তো আর সেখানে থাকতে পারব না। সরকারিভাবে অসহায় মানুষকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয় বলে শুনেছি। সেখান থেকে একটি ঘর পেলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নিজের একটি স্থায়ী বসতি আর ঠিকানা হতো।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে অংশ নিয়েছি দেশের বৈষম্য দূর এবং প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে। সেই আন্দোলন সফলও হয়েছে। তবে এখন আমি জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। তাই সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আমার মাথার ভেতর এখনো রয়ে যাওয়া গুলিগুলো বের করতে আর্থিক সহযোগিতা এবং বাকি দিনগুলো যেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ভালোভাবে পার করতে পারি, সেজন্য আমাকে জমিসহ সরকারি একটি ঘর প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

আলাউদ্দিনের ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নানু মোসাম্মৎ জমিলা খাতুন জানান, ছোটবেলা থেকে আমার কাছে রেখে ওদের বড় করেছি। পরে আমার জমিতেই থাকতে দিয়েছি। তবে আমার মৃত্যুর পর ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা জানি না। এই জমি তো ওদের না। এই সামান্য জমিটুকুর অংশীদারও অনেক। সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করলে কিছুটা হলেও ভালো থাকবে। আমি নিজে বয়স্ক হলেও ভাতা পাই না। আমাকে সরকারিভাবে যে কোনো একটি ভাতা প্রদানের অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ বলেন, সরকারিভাবে আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে জেনেছি। তবে এজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অনলাইনে আবেদন করে আমাদের কাছে একটি কপি জমা দিতে হবে। এরপর আমরা তা স্থানীয়ভাবে তালিকাভুক্ত করব।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহতদের তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায়ই শেষ হওয়ার দিকে। এটির কাজ সমাপ্ত হলে তাদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথ মূল্যায়নে কার্যকর ভূমিকা নেবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হবিগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩০ 

ধেয়ে আসছে গ্রহাণু, ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ঢাকাও!

আজহারির মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ

আজ ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই: জামায়াত আমির

 শিক্ষার্থীদের অস্ত্র চালানো শেখাচ্ছে পোল্যান্ড

গঠন হচ্ছে নতুন ছাত্রসংগঠন, আত্মপ্রকাশ আজ

ছাত্রলীগ নেতা মিস্টার গ্রেপ্তার

চীনের বিরল সামরিক মহড়া

জামায়াত নেতার স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

১০

২২ ফেব্রুয়ারি : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১১

আসছে বজ্রবৃষ্টি, পড়তে পারে শিলা

১২

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৩

২২ ফেব্রুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৫

১৫

বান্দরবানে অপহরণ চক্রের চার সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৬

বগুড়ায় এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ

১৭

বদলি আদেশ প্রত্যাহার দাবিতে ব্যাংকের ভেতর অবস্থান কর্মকর্তার

১৮

টঙ্গীতে সমবায় সমিতির টাকা ফেরতের দাবিতে অবরোধ

১৯

১১৪ বছর ধরে অভুক্তদের অন্ন দেয় আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল

২০
X