কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জলবায়ু নিয়ে ঢালাও রাষ্ট্রীয় বয়ান পরিবর্তন জরুরি : শারমীন এস মুরশিদ

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ছবি : সৌজন্য
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ছবি : সৌজন্য

জলবায়ু নিয়ে ঢালাও রাষ্ট্রীয় বয়ানে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশানে সুইডেন দূতাবাসের অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) ক্রিয়া প্রকল্প আয়োজিত জেন্ডার সমতা ও জলবায়ু জোট-বাংলাদেশের কনফারেন্সে এ মন্তব্য করেন তিনি।

‘উইমেন লিডিং দ্য ওয়ে : ইনফ্লুয়েন্সিং পলিসি অ্যান্ড কোলাবোরেটিভ ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু নিয়ে ঢালাও রাষ্ট্রীয় বয়ান দিয়ে আর হবে না। বয়ানে পরিবর্তন আনতে হবে। নীতিমালার মাধ্যমে চরম দুর্যোগপীড়িত এলাকার জন্য আলাদা করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। এ নিয়ে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির জায়গা বেড়েছে কিন্তু খুব বেশি গুছিয়ে কাজে এগোতে পারিনি। জলবায়ু নিয়ে আমরা বহুদিন হলো কাজ করছি। কিন্তু কাজগুলো খুব বিচ্ছিন্নভাবে হয়। আমরা ন্যায্যতার কথা বলি কিন্তু বরাদ্দের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন থাকে না। তাই বড় না পাওয়ার জায়গা থেকে গেছে।

অনুষ্ঠানে ‘টাইম পোভার্টি, জেন্ডার ইকুইটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমজেএফের পরিচালক-রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রকল্প বনশ্রী মিত্র নিয়োগী এবং ‘ইফেক্টিভ এনগেজমেন্ট অব উইমেন ইন ন্যাপ (এনএপি) অ্যান্ড এনডিসি প্রসেস অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা।

তারা জানান, যে কোনো দুর্যোগকালে নারীর ওপর গৃহস্থালির চাপ ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায় এবং তাদের উপার্জনমূলক কাজ কমে যায়। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে নারীরা কতটা টাইম পোভার্টির শিকার হচ্ছে, কতটা সহিংসতার শিকার হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও জেন্ডারের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয় না। সব মিলিয়ে নাগরিক অধিকার থেকে নারীরা বঞ্চিতই থেকে যান।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট দিলরুবা হায়দার বলেন, আমরা সবসময়ই মোটাদাগে বলি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিন্তু এর পেছনের কারণটা নিয়ে আলোচনা হয় না। আমরা অঞ্চল ও প্রয়োজনভেদে শ্রেণিবিভক্ত তথ্য সংগ্রহ করি না। ফলে যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিতে পারি না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যে বরাদ্দ আসে, তা ব্যবহারেও নারীর কথা বিবেচনায় রাখা হয় না।

ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম বলেন, নারীদের উপার্জনের ৩০ শতাংশ চলে যায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়। আর্থিক টানাপোড়েন জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ফলে তৈরি হওয়া নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা নারীর ক্ষমতায়নের পথে বড় অন্তরায়। নারীর ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমাতে বাড়ির পুরুষদের জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক জানান, কমিউনিটি বেজড অর্গানাইজেশনগুলোর মাধ্যমে তৃণমূলের মতামত ও পরামর্শগুলো তুলে এনে নীতিনির্ধারণ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।

অক্সফাম বাংলাদেশের হেড অব ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস রাইটস ড. মোহাম্মদ ইমরান হাসান বলেন, বিদ্যমান জেন্ডার গ্যাপ অ্যাড্রেস করা হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ৪০ শতাংশ বেশি হতো। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ন্যাপ ও এনডিসিতে তিনটি পর্যায়ে কাজ করতে হবে। এগুলো হলো- জেন্ডার গ্যাপ রিকগনিশন, প্রসেসে ইন্টিগ্রেশন এবং দায়িত্ব ও সুফল ভাগ করে দেওয়া।

এ জোটের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন নাগরিকতা-সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের ডেপুটি টিম লিডার ক্যাথারিনা কোনিগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রেজিলিয়েন্ট লাইভলিহুডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মেহের নিগার ভুঁইয়া।

এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী আহসান উদ্দিন আহমেদ, এমজেএফের গভর্নিং বডির সদস্য পারভীন মাহমুদ, এফসিএ এবং সুইডেন দূতাবাসের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করেন পারভীন মাহমুদ। তিনি বলেন, পরিবর্তনের শুরুটা হতে হবে পরিবার থেকে।

আহসান উদ্দিন বলেন, নারীর বিপন্নতার কথা আমরা অনেক আগে থেকেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলছি কিন্তু এখনো অগ্রগতিতে অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

মারিয়া স্ট্রিডসম্যান বলেন, আমাদের সব কাজ জেন্ডার লেন্স দিয়ে দেখতে হবে। যদি আমরা সহনশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ চাই, তাহলে অভিযোজনের কেন্দ্রে নারীকে রাখতে হবেই। আমি গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানাব যেন তারা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ আলোচনাগুলো বেশি বেশি প্রচার করে।

কনফারেন্সে চর, হাওর, পার্বত্য এলাকা ও উপকূলীয় এলাকা থেকে আসা জেন্ডার সমতা ও জলবায়ু জোট-বাংলাদেশের প্রতিনিধি নিজ নিজ এলাকার সমস্যা ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু এ বিষয়ক নীতিমালা তৈরির সময় নারীদের কথা সাধারণত গুরুত্ব পায় না। তাই জেন্ডার সমতা ও জলবায়ু জোট-বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা নীতিমালা তৈরির জন্য একেবারে তৃণমূলের নারীদের বক্তব্য তুলে আনার চেষ্টা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নরসিংদীতে ট্রেনের ধাক্কায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

এলজির উদ্যোগে ‘এলজি অ্যাম্বাসেডর চ্যালেঞ্জ ২০২৫’

ওয়্যারড্রবে গুলি ও অস্ত্র রেখে দেন ইফতি, অতঃপর...

আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলেন নুর

জামায়াতকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী-প্রতারক’ আখ্যা বিএনপি নেতা বাচ্চুর

খেলাফত মজলিস-এনসিপির সংলাপ, ৮ দফা ঐকমত্য

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে আবেদনের সময় বাড়ল

৩০ হাজার তরুণকে নিয়োগ দিল ফিলিস্তিন যোদ্ধারা

ইস্টার সানডে উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে প্রিন্সের শুভেচ্ছা বিনিময় 

বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী

১০

আসছে ইমন-দীঘির ‘দেনাপাওনা’

১১

জিয়া মঞ্চের সভাপতি হওয়া সেই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বহিষ্কার

১২

কোনো সরকার বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করতে পারেনি : এবি পার্টি

১৩

পূর্ব জেরুজালেমে খ্রিস্টানদের সঙ্গে যা করল ইসরায়েলি পুলিশ

১৪

‘বিতর্কিত’ সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

১৫

৬ দফা দাবিতে বরিশালে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ

১৬

এক সন্তানের দুই জন্ম—মায়ের সাহস আর চিকিৎসার মিরাকল!

১৭

কিশোরগঞ্জে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে আ.লীগের মিছিল

১৮

সিলেটে টেস্ট / ভুলে যাওয়ার মতো একটা দিন কাটলো বাংলাদেশের

১৯

শান্তিরক্ষী মিশনে আরও নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

২০
X