আওয়ামী লীগ বিডিআর হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে কিনা তা তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের প্রচ্ছন্ন নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া বিডিআর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত সম্ভব ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল একটা অজুহাত। এ সময় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রশাসনের পোশাক পরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন কি না, সেটিও তদন্ত করা উচিত।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন এ সংক্রান্ত সব তথ্য বের করে আনবে। এ দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্যই ৫৭ জন চৌকস সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা এবং যারা মাস্টারমাইন্ড ছিলো তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তরের সংঘটিত বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫০ জনের বিচার কাজ শেষ হয়েছে। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে ২২৮ জনকে সাজা প্রদান করা হয়। এছাড়া ২৮৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
হাই কোর্টের রায়ের পূর্বে ১৫ জনসহ মোট ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০১০ সালে ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে এ মামলার বিচার ঝুলে যায়। তবে শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠে।
মন্তব্য করুন