শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘মার্চ টু ঢাকা’ ঠেকাতে যে পরিকল্পনা করেছিল শেখ হাসিনা সরকার

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪ আগস্ট দুই দফায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়।

বেঠকে ছাত্রদের কর্মসূচি মোকাবিলায় আবারও কারফিউ জারি ও তা বলবৎ করা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট সকাল থেকেই সেনাবাহিনী জানতে পারে যে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত। তবে পুলিশ বিষয়টি জানত না। তাই তারা সরকারকে রক্ষা করতে দিনভর সর্বাত্মকভাবে মাঠে ছিল।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ওএইচসিএইচআর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ আগস্ট সকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে অংশ নেন সেনা, বিমান, নৌ, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধানরা। বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। তারা ‘মার্চ টু ঢাকা’ প্রতিরোধের জন্য আবারও কারফিউ জারি ও তা বলবৎ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ওই দিন সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে (গণভবন) আরেকটি বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজে অংশ নেন। অন্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার/ভিডিপির প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল।

জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বৈঠকে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ঢাকা রক্ষার বিষয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন।

বৈঠকগুলোতে অংশ নেওয়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বৈঠকে একটি পরিকল্পনার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল যে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের ঢাকার কেন্দ্রস্থলে প্রবেশে বাধা দিতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সাঁজোয়া যান ও সেনা মোতায়েন করে ঢাকার প্রবেশপথগুলো অবরুদ্ধ করবে, বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেবে। অন্যদিকে পুলিশ ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ’ করবে।

বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, কোনো বিরতি ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য কঠোর কারফিউ চলবে। আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী একটি বিবৃতি দেন। তিনি দেশবাসীকে ‘এই সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন’ করার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) তৎকালীন মহাপরিচালক ৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ৫৫ মিনিট) বিজিবির মহাপরিচালককে পরপর দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠান।

সেই বার্তাগুলোর হার্ড কপি পেয়েছে ওএইচসিএইচআর। এই হার্ডকপির তথ্য অনুসারে, প্রথমটি ছিল একটি ফরোয়ার্ড করা সম্প্রচারিত বার্তা, যা আন্দোলনের নেতাদের বলে মনে হয়। এতে তারা ঢাকায় প্রবেশপথগুলো সম্পর্কে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে জানিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় বার্তাটি প্রতিরক্ষা আদেশের রূপরেখার একটি ভিডিও রয়েছে বলে মনে হয়। এতে প্রতিরক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন, একটি তৃতীয় দূরপাল্লার ইউনিট, একটি ব্যাকআপ ইউনিট, একটি পশ্চাদ্ভাগের বাহিনীর কথা বলা হয়েছে।

৫ আগস্ট সকালে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা মূলত দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা তাদের ওপর অর্পিত ভূমিকা পালন করেননি।

জাতিসংঘের তদন্ত দলকে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন, সেনাবাহিনী যে বাহিনী মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটা তারা মোতায়েন করেনি। আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বিজিবি প্রতি ঘণ্টায় বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার বিক্ষোভকারীকে ঢুকতে দিয়েছে, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল।

তৃতীয় এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তখনকার পরিস্থিতি স্মরণ করে বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে ৫০০ থেকে ৬০০ বিক্ষোভকারীকে সেনাবাহিনীর বাধা ছাড়াই উত্তরা থেকে ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে আসতে দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে।

চতুর্থ আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না।

‘মার্চ টু ঢাকা’ থামাতে, বিক্ষোভকারীদের শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছাতে বাধা দিতে তখনো পুলিশ অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি চালাচ্ছিল।

তদন্ত দলকে পুলিশের এক কমান্ডার ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সেদিন সকাল থেকেই সেনাবাহিনী জানত, শেখ হাসিনার পতন হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ জানত না। তাই পুলিশ তখনো সরকারকে রক্ষা করতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে ছিল।

ওএইচসিএইচআর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলি করার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। সব কটির ধরন ছিল একই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ড. ইউনূসের সঙ্গে ইলন মাস্কের ফোনালাপ, পাশেই ছিলেন ট্রাম্প

গণহত্যার রিপোর্ট তৈরির শুরু থেকে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছিল : সাদিক কায়েম

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : মিরাজ 

সরকারকে শরীফ উদ্দিন জুয়েল / আপনারা ডেভিল ধরতে না পারলে যুবদলকে দায়িত্ব দিন 

বেস্টসেলার রবিনের ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট ও সফল ক্যারিয়ার

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে তারেক রহমানের স্ট্যাটাস

প্রাইম মেডিকেলে শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিং, জড়িতদের বিচার দাবি

ফেনী সদর থানার ওসিকে বদলি

চবিতে শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত সেই ছাত্রীসহ বহিষ্কার ১২

‘মার্চ টু ঢাকা’ ঠেকাতে যে পরিকল্পনা করেছিল শেখ হাসিনা সরকার

১০

আওয়ামী দোসরদের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তা প্রকাশ করুন : লায়ন ফারুক

১১

‘ডেভিল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ব্যবস্থা নেই প্রশাসনের’

১২

মণিপুরে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি

১৩

ভিডিও বার্তা দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

১৪

ঘাপটি মেরে থাকা ডেভিলদের হান্ট করুন : জুয়েল

১৫

শারীরিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ

১৬

জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মশাল মিছিল

১৭

‘দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন’

১৮

কাল পবিত্র শবে বরাত  

১৯

৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সনাতনী জোট

২০
X