বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সব বাঙালিই এ দিনটি পালন করে থাকেন। পহেলা বৈশাখ শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক। তবে আগামী পহেলা বৈশাখ ভিন্নরূপে উদযাপন করার ঘোষণা দিয়েছে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ উসমান বিন হাদী এ ঘোষণা দেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- পহেলা বৈশাখের সকালে শাহবাগে আলু ভর্তা ও পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা দিয়ে পান্তা খাবো সবাই। সঙ্গে থাকবে নারিকেল, গুড় ও কাঁঠালি কলা।
কালবেলার পাঠকদের জন্য শরীফ উসমান বিন হাদীর ফেসবুক স্ট্যাটাটি তুলে ধরা হলো-
ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে এবার একটা সত্যিকারের বাংলাদেশি বৈশাখ উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। এতে ইলিশ-গরু কিছুই থাকবে না। সকালে ইলিশ বা গরু দিয়ে পান্তা খেয়ে মাঠে যাওয়ার সঙ্গতি বাংলাদেশের কৃষকের কোনোকালেই ছিল না। আরবান মিডেল ক্লাস ও ছায়ানট-উদীচীদের চাপিয়ে দেওয়া করপোরেট বাঙালি বাণিজ্যের বিপরীতে আমরা বাংলার আপামর কৃষক-শ্রমিক-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বৈশাখ উদযাপন করতে চাই।
সকালে শাহবাগে আলু ভর্তা ও পেঁয়াজ-মরিচ ভর্তা দিয়া পান্তা খাবো সবাই। গরম ভাতে পানি ঢেলে বানানো পান্তা না এইটা। সঙ্গে থাকবে নারিকেল, গুড় ও কাঁঠালি কলা। শত বছর ধরে বাংলার কৃষকরা যেভাবে খায় আর কী। থাকবে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। যেখানে আবহমান বাঙলার দৈনন্দিন জিনিসপত্রের জোগান থাকবে বিরাট।
যেমন : রঙিন বাসন, কুলা, ঝুড়ি, হাঁড়ি, হোগলা, শীতল পাটি, তাঁতের গামছা, শাড়ি, লুঙ্গি... ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে থাকবে নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, মোড়ক যুদ্ধ, এক্কাদোক্কা, কানামাছি, হাঁড়িভাঙ্গা ও হাডুডুর আয়োজন। প্রাচীন বাংলার খাবারের সঙ্গে পরিচয় করাব জেন জি-কে। তাদের চেনাবো- বাতাসা, সন্দেস, নকুল, মোয়া, মুড়কি, শনপাপড়ি ও হরেক রকম পিঠাপুলি। পরিবেশিত হবে জারি, বাউল, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি। করপোরেট আধিপত্যে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী হালখাতাকে উদযাপনে ফিরিয়ে আনবো আমরা।
ব্যবসায়ীদের আগের মতো হালখাতার কার্ড বানাতে উৎসাহিত করব। মুসলমান ব্যবসায়ীরা হালখাতায় মিলাদ পড়াবেন। হুজুরকে দিয়ে নতুন টালি খাতায় বিসমিল্লাহ লেখাবেন। দোয়া শেষে গরম জিলাপি খাওয়াবেন।
সনাতনী ভাইয়েরা তাদের দোকানে ধর্মীয় রীতি মোতাবেক প্রার্থনা করবেন। শঙ্খ ও ঢাক বাজাবেন। নেমতন্নে আমাদের নিমকি ও মিষ্টি খাওয়াবেন।
বিকেলে একটা বৈশাখী র্যালি বের করব। তার সামনে থাকবে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, পালকি, ঢেঁকি, লাঙল... বাচ্চাদের হাতে থাকবে কাঠ দিয়ে বানানো কাস্তে, কোদাল, নিড়ানি ও বাঁশের ঝুড়ি। মাথায় থাকবে ছোট্ট মাথাল। আরও অনেক কিছুর প্ল্যান আছে। খুব সংক্ষেপে আপনাদের একটু জানিয়ে রাখলাম।
এমন একটা আয়োজনে আপনাদের প্রচুর হেল্প লাগবে আমাদের। প্রচুর হেল্প।
বাঙলাকে আমরা কলকাতার কৌলিন্য থেকে মুক্ত করে আপামর জনসাধারণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত সেজদার রসম থেকে মাথা তুলে আমরা জনতাকেই জমির মালিক বানাতে চাই। স্টেইকবিহীন আপামরের প্রাণের সংস্কৃতিকেই আমরা বাংলার জাতীয় সংস্কৃতি বানাতে চাই। হেল্প করবেন তো আপনারা?
মন্তব্য করুন