প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা ২০২২-এর পুনঃসংকলন ও সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার (বিজেআইএম) প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শিকদার আবীর মাহমুদ (স্যাম) জাহান।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে এ পদত্যাগের কথা জানান।
পোস্টে তিনি বলেন, সুপ্রিয় সাংবাদিক সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছি- আপনারা হয়তো অনেকেই ইতোমধ্যে জানেন যে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা ২০২২-এর যে পুনঃসংকলন ও সংস্কারের জন্য কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেখানে অন্যান্য সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আমারও অবস্থান হয়েছিল মূলত আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতিনিধি হিসেবে।
তিনটি মিটিংয়ের মাধ্যমে যে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি মোটেই একমত নই। আমার প্রতিনিধিত্বের অধীনে অন্তত ৮৫ সাংবাদিকের মূল্যবান মতামত নিয়ে আমি আমার প্রস্তাব লিখিত আকারে পেশ করেছিলাম। যার একটিও গ্রহণ করা হয়নি। খুবই স্বল্প সময়ের সর্বশেষ মিটিংয়ে যথেষ্ট সময় নিয়ে এসব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ না দিয়েই নীতিমালা ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়েছে।
আমার মতে, সেটা মোটেই সাংবাদিকবান্ধব হয়নি। বরং সরকারবান্ধব হয়েছে। সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে তাদের একটি হুড়োতাড়ার মধ্যে রেখে পুরো ব্যাপারটায় ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।
এ নীতিমালা পাস হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদায় নেওয়ার পর এটা ভয়ংকর একটা রূপ ধারণ করবে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের অপব্যবহারের জন্য বিস্তর ফাঁকফোকর রয়ে যাবে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ভীষণ সাংঘর্ষিক। তাই, আমি এ নীতিমালার প্রতি তীব্র আপত্তি রেখে ওই কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।
নীতিমালায় কী কী আছে, সেটা আমি এ মুহূর্তে বলতে অপারগ যেহেতু তা এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে শিগগিরই সেটা যৌক্তিক, ব্যবহারিক এবং সময়োপযোগী করে পুনঃলিখন না করলে তা চরমভাবে ব্যাকফায়ার করবে বলে আশঙ্কা করছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. সরওয়ার আলমকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা-২০২২ পুনর্মূল্যায়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটির সদস্যরা হলেন- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খান, প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মেদ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ইলিয়াস হোসেন, বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম) এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শিকদার আবীর মাহমুদ (স্যাম) জাহান, বিএসআরএফ সদস্য মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ করোসপন্ডেন্ট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) সালিম সামাদ, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ ও উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ভুঁঞা (সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন)।
এ কমিটির আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা।
এ ব্যাপারে স্যাম জাহান কালবেলাকে বলেন, যে খসড়াটা নীতিমালায় পরিণত হতে যাচ্ছে, তা যেন পুনঃসংশোধিত করে যুগোপযোগী করা হয়। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এটা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
মন্তব্য করুন