দৈনিক কালবেলা পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘আইসিটি ডিভিশনের পিডি সাখাওয়াতের তুঘলকি কাণ্ড!’ শিরোনামে ৩০ জানুয়ারি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটিডি) এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমির (ইডিজিই) প্রকল্প পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি বলেছেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি দৈনিক কালবেলা পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত “আইসিটি ডিভিশনের পিডি সাখাওয়াতের তুঘলকি কাণ্ড!” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিয়োগ, টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বাছাই, গাড়ি ব্যবহার, বিপুল সম্পদ তৈরি, রাকিন প্রপার্টিজে ফ্ল্যাট ক্রয়-সম্পর্কিত যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য বা সমর্থিত সূত্রের উল্লেখ না করে তথ্য-প্রমাণবিহীন ঢালাওভাবে দুর্নীতির অভিযোগ আনা কোনোভাবেই সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ করছি।’
‘কারণ ইডিজিই প্রকল্পের জন্য জনবল নিয়োগ, টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বাছাই, গাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজালে (ডিপিপি) উল্লিখিত চাহিদা, সরকারের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ অনুসরণ, বিশ্বব্যংকের প্রকিউরমেন্ট রেগুলেশন-সেপ্টেম্বর ২০২৩ এবং তাদের সম্মতি সাপেক্ষে করা হয়। সুতরাং এখানে নিয়োগ এবং টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি করে দুর্নীতির কোনো অবকাশ নেই। আমি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, প্রকল্পের জন্য কোনো গাড়ি কেনা হয়নি। ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজালে (ডিপিপি) উল্লিখিত বাজেট ও ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী ভেন্ডরের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করে প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি পিডি হিসেবে যোগদানের আগেই নিয়ম অনুসরণ করে ভেন্ডরের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে।’
‘উল্লেখ্য, আমার আগে দুজন প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর আমি নিজে গাড়ি কিনেছি। গাড়ি ক্রয়ে সরকার প্রদত্ত সুবিধার আওতায়, যা প্রতিবছর ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করা হয়। আমি আরও জানাতে চাই, ২০১৬ সাল থেকে আমি কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত ছিলাম। সে সময় থেকে আমার পরিবার সেখানে অবস্থান করে। আমার ছেলে-মেয়েরাও সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। পরে আমার স্ত্রী ও ছেলে কানাডায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ বিষয়টি সম্পর্কে আমার যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবগত। কিন্তু আমার পরিবারের নামে কোন সম্পদ নেই। রাকিন প্রোপার্টিজেও আমার নিজের বা পরিবারের কারো নামে কোন ফ্লাট নেই। আপনার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে যা প্রকাশিত হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তা খুঁজে বের করার অনুরোধ করছি।’
‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “ইডিইজি প্রকল্পের এসব বিষয়ে নিয়ে অসন্তুষ্ট খোদ বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকি করতে গিয়ে সংস্থাটি এসব অনিয়ম দেখতে পায়। ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যেই বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।” এ ধরনের বক্তব্য একদমই সত্য নয়, এটি মনগড়া ও বানোয়াট তথ্য। প্রকৃত তথ্য হলো, প্রথমত, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সরকার বিশ্বব্যাংককে বাজেট সহায়তা প্রদানের অনুরোধ করে। সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তাদের অর্থায়নের প্রকল্পের আকার ছোট করে অর্থ সাশ্রয় করে তা সরকারকে বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইডিজিই প্রকল্পের আকার ছোট করা হয়।’
‘পরিতাপের বিষয়, প্রতিবেদনে কোনো সমর্থিত বা নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রের উল্লেখ না করে মিথ্যা তথ্যের সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যা শুধু বস্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থিই নয়, মানহানিকরও বটে। আমি সরকারের একজন যুগ্ম সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পোস্টিং আদেশে ইডিজিই প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। আমার চাকরিজীবনে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থায় আমাকে পোস্টিং দিয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। সুতরাং আমাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পিত সংবাদ পরিবেশন আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়াসহ জনমনে ভুল বার্তা দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় আমি এ ধরনের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
মন্তব্য করুন