এক মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর দাবি জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা ও সাত কলেজের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনাসহ আরও চারটি দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবিগুলো তুলে ধরেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফোকাল পারসন আব্দুর রহমান ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারি সাগর।
এ সময় আব্দুর রহমান বলেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি আমরা দেব না। মনে রাখতে হবে- শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরস্পর পাশাপাশি থেকে আমরা শিক্ষা অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে চাই।
কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারি সাগর বলেন, আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি নিয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন-কর্মসূচি করে আসছি। আমাদের দাবি ছিল- অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে হবে। কারণ, যে লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটা প্রায় ৮ বছরেও অর্জন করা যায়নি।
এ সময় জাকারিয়া বারি সাগর বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমরা যে লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেছি, সেটা ছিল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করতে হবে।’ আমাদের সে দাবিও প্রায় পূরণ হওয়ার পথে রয়েছে। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে সময়ের প্রয়োজন। এটার মডেল কী হবে সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।’ শিক্ষা উপদেষ্টা শুরু থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক ছিলেন। তিনি এর আগেও আমাদের দাবি বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময় আশ্বস্ত করেছেন। আমাদের বিশ্বাস, উপদেষ্টার আশ্বাস অনুযায়ী আমরা খুব শিগগিরই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাস দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধীনে চরম ভোগান্তির মধ্যে ছিলেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, ঢাবির অধীনে আমাদের পরিচয় সংকটের বিষয়টি। আমরা সরকারকে আমাদের সমস্যার বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা আমাদের কথা শুনেছেন, দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং সবশেষ চূড়ান্তভাবে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাস দিয়েছেন, সেজন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা পড়াশোনা করতে চাই। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করছি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হবে বিশ্বে রোল মডেল।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন হবে। সংকট নিরসনের জন্য আমাদের সব পক্ষের সাথে আন্তঃযোগাযোগ রাখতে হবে । চলমান সাত কলেজের পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য ইউজিসি, ঢাবি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় প্রয়োজন আছে। উদ্ভূত বিভিন্ন ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে এটা আমাদের বিষয় না। এছাড়াও পুলিশের শিক্ষার্থীকে হামলার ঘটনার জন্য পুলিশের একটা দায় আছে, সে অনুযায়ী বিচারের জন্য একটা প্রত্যাশা রয়েছে। সাত কলেজের সব শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করি। ছাত্রদের সব দাবি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন কোনো রকম বিভেদ বা অনৈক্য না থাকে। আমাদের ঐক্য বিনষ্টের জন্য নানারকম চক্রান্ত চলছে। সাত কলেজের সমস্যাগুলোকে আমরা প্রত্যেকটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাড্রেস করব। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর রূপরেখা দেবে। এছাড়াও চলমান পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করলে সে যেই করুক তাকে আমরা ছাড় দেব না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবকিছুর সমাধানে যাব, যদি সমাধান না হয় তখন আমরা রাস্তায় যাব। সাত কলেজে ইস্যু নিয়ে আমাদের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাবি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে নতুন করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন