বাসস
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশের ভয়ে বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন গুলিতে আহত শাকিল

শাকিল মিয়া। ছবি : সংগৃহীত
শাকিল মিয়া। ছবি : সংগৃহীত

হঠাৎ এগিয়ে আসা পুলিশের একটি গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া শুরু হয়। চোখের সামনেই অনেকে হতাহত হয়। গুলি লাগে শাকিলের শরীরেও। উদ্ধারের পর বাড়িতে নিয়ে গোপনে চলে তার চিকিৎসা। পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেননি আহত শাকিল মিয়া।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত মো. শাকিল মিয়া (২০) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান (৫১) এর ছেলে। তার মা ফিরোজা বেগম (৪৭)। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শাকিল মিয়া দ্বিতীয়। বড় ভাই শামিম আহম্মেদ (২৬) প্রবাসী। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন। ছোট বোন স্বর্ণা আক্তার (১৮)। বিয়ে হয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলায়।

আহত শাকিলের বাবা একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করলেও এখন বেকার। বাসায় থাকেন। মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী।

মা-বাবাসহ পরিবারের সকলে থাকেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরের চাষাঢ়া এলাকায়। সেখানেই আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট ছররা গুলিবিদ্ধ হন শাকিল। তার পিঠে ও কানে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে। স্বজনসহ পরিবারের লোকজন গুলি বের করে বাড়িতেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শাকিল এখনও ব্যথামুক্ত হতে পারেননি। হঠাৎ হঠাৎ গুলিবিদ্ধের জায়গায় ব্যথায় এখনো তিনি কাতর হয়ে পড়েন।

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় একটি হার্ডওয়্যার ও ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত শাকিল মিয়া। তিনি জানান, দোকান মালিক মিজান আহমেদও ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। যে কারণে নির্বিঘ্নে তিনি ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে পেরেছেন।

আহত শাকিল মিয়া বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনই ছিল আমাদের লক্ষ্য। চাষাঢ়া এলাকায় অনেক সহকর্মীসহ পরিচিতজনদের নিয়ে আন্দোলনে যেতাম। গত ৪ আগস্ট পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হচ্ছিল। আমি সামনের ভাগেই ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া শুরু করে। এতে আমি আহত হই। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বাড়িতেই আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তখন ছিল না। পুলিশের গুলি এসে বাড়িতেও পড়ছিল। বাড়ির সবাই আতঙ্কের মধ্যে থাকতাম সব সময়।

শাকিল আরও বলেন, আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছি। শান্তির জন্য লড়েছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই।

আহত শাকিল মিয়ার মা ফিরোজা বেগম বলেন, পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে নিয়ে ছেলের ভালো চিকিৎসা সেদিন করাতে পারিনি। ছেলে এখনও ব্যথার যন্ত্রণা ভোগ করে যাচ্ছে। ছেলের কষ্ট দেখে আমরা কি আর ভালো থাকতে পারি? কিন্তু আমরা উপায়হীন। সংসারই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চিকিৎসার টাকা কোথা থেকে পাব?

শাকিলের পিতা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ভাগ্যবান আমার ছেলে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছে। ছেলে আহত হয়েছে মনে কষ্ট নেই, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার তো পতন হয়েছে। এটা খুবই আনন্দের ও খুশির বিষয়।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেলার ১৩০ জন আহতের একটি খসড়া তালিকা আমরা পেয়েছিলাম। পরে যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে তালিকায় ৭৪ নম্বরে আছে আখাউড়ার মো. শাকিল মিয়ার নাম। তার নামটি আহতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি সুপারিশসহ গৃহীত হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা খুনি শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব

আজও বায়ুদূষণে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ঢাকা

বন্ধ ফটকের নিচ দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকলেন কলেজছাত্রী, ভিডিও ভাইরাল

২০ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হবে এবারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

সারসহ ট্রলি আটক, অভিযোগের তীর দুই বিএনপি নেতার দিকে

১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় আজ 

মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও পড়াশোনা অনিশ্চিত শয়নের

৫ ফেব্রুয়ারি : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা 

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ

১০

০৫ ফেব্রুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১১

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১২

চবিতে দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে কোরআন বিতরণ 

১৩

বিএনপির মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ, তিন নেতা আহত

১৪

১৪ লাখ ভারতীয় জাল রুপিসহ আ.লীগ নেতা আটক

১৫

রুমায় বৌদ্ধ বিহার আগুনে পুড়ে ছাই

১৬

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তুহিন গ্রেপ্তার 

১৭

শনিবার ঢাবিতে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আলু ঘাটি উৎসব

১৮

এনপিপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন 

১৯

সীতাকুণ্ডে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ নিহত ৩

২০
X