সদ্য সমাপ্ত বছরে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় দেড়শ ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় ৭২টি গণমাধ্যম বাংলাদেশকে নিয়ে ৩২টি বিষয়ে মোট ১৩৭টি ভুয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) তথ্য যাচাই প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এসব উঠে আসে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয়দের অপপ্রচার কয়েকগুণ বেড়ে যায়। প্রথম ছয় মাসে মাত্র ১২টি অপতথ্য ছড়ালেও আগস্টে এক মাসেই প্রচার হয়েছে ৫৩টি অপতথ্য।
পরের তিন মাস কিছুটা কমলেও ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার ইস্যুতে ভর করে ফের আগস্টের মতো একই সংখ্যক (৫৩) অপতথ্য প্রচার করেছে ভারতীয়রা।
বাংলাদেশ নিয়ে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ সবচেয়ে বেশি অপতথ্য প্রচার করেছে ভারতীয়রা। গেল বছর বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারিত ১৪৮টি অপতথ্যের মধ্যে ১১৫টিই এক্সের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়। এসব অপতথ্যের মধ্যে ১১৫টিই সাম্প্রদায়িক অপতথ্য। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই এক্সে ৫১টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করেছে ভারতের বাংলা ভাষার স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’। ৩২টি ঘটনার মধ্যে ১০টিতেই এই চ্যানেল ভুল তথ্য প্রচার করেছে।
এই তালিকায় পরের তিন অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে হিন্দুস্তান টাইমস, জি ২৪ ঘণ্টা এবং আজতক। ৫ম অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, মিন্ট, ইন্ডিয়া টুডে, টিভি নাইন, ওয়ার্ল্ড উজ ওয়ান নিউজ এবং এই সময়।
ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে কোনো একজন মুসলিম ঘটনাক্রমে হামলা বা নিগ্রহের শিকার হলে সেই ব্যক্তিকে হিন্দু দাবি করে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে অন্তত ৩৬টি।
বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্যের প্রচারে ভূমিকা রেখেছেন ভারতীয় রাজনীতিবিদরাও। এর মধ্যে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী অন্তত ১টি, বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল অন্তত ৩টি, ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী কর্তৃক অন্তত ১টি করে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন, ভারতীয় গণমাধ্যম অপি ইন্ডিয়ার সম্পাদক নুপুর শর্মাসহ আইনজীবী ও নানা পেশার ব্যক্তিত্বরা অপতথ্যের এই প্রবাহে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন।
মন্তব্য করুন