সাইবার হামলার শঙ্কায় টানা ৩৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভার। এর আগে ১৪ আগস্ট রাত ১২টায় সার্ভার বন্ধ করা হয় বলে জানিয়েছেন এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) হুমায়ুন কবীর।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
ডিজি বলেন, সাইবার হামলার শঙ্কা থেকে ১৪ আগস্ট রাত ১২টায় সার্ভার বন্ধ করা হয়। যদিও আগে থেকেই ১৭১টি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে- এমন শঙ্কায় ব্যক্তি পর্যায়ে জানানো হয়নি। আজ দুপুর আড়াইটায় আবার চালু করেছি।
এদিকে, এনআইডি সার্ভার যে বন্ধ রয়েছে তা বোঝা গেছে আজ সকাল থেকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সেবাপ্রত্যাশীরা। তারা জানান, আগে জানালে হয়তো এত দূর থেকে এসে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এ ছাড়াও এনআইডি সার্ভার বন্ধ থাকায় ব্যাহত হয় ব্যাংক, পাসপোর্টসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য রয়েছে এনআইডি সার্ভারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যভান্ডারের কোনো ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) বা যথাযথ ব্যাকআপ (বিকল্প সংরক্ষণ ব্যবস্থা) নেই। ডিআরএস না থাকায় জাতীয় এই তথ্যভান্ডার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি ইসির তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির একটি বৈঠকেও বিষয়টি উঠে আসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনআইডির তথ্যভান্ডারে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের কমবেশি ৩০ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য আছে। ১৭১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইসির এই তথ্যভান্ডার থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য যাচাই-সংক্রান্ত সেবা নিচ্ছে।
সম্প্রতি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইট থেকে সম্প্রতি লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়। এরপর দেশে ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এদিকে, ভারতীয় হ্যাকারদের সাইবার আক্রমণের শিকার দেশের ২৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট। এতে ফাঁস হয়েছে কয়েক হাজার তথ্য।
হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেসের তথ্যও ফাঁস হয়েছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) ভারতীয় হ্যাকারদের এই হামলার শিকার হয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলো।
১৫ আগস্টকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বড় ধরনের সাইবার হামলার হুমকি দেয়। এ হুমকির পর দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়। এ সতর্কতার মধ্যেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে তথ্য ফাঁসসহ বেশ কয়েকটি হামলার শিকার হয়েছে।
জানা গেছে, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারী এবং বিনিয়োগ আবেদনকারীর তথ্য রয়েছে।
ভারতীয় হ্যাকারদের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪০ হাজার রেকর্ডেট তথ্য দখলে নিয়েছে তারা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি কর পোর্টাল থেকেও কিছু তথ্য ফাঁস করেছে হ্যাকাররা।
আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট, টিকেটিং ওয়েবসাইট ও ব্যাংক ওয়েবসাইট।
মন্তব্য করুন