বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে চাকরি হারানো ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন পুনরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক্স বিভাগে যোগদান করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জোরপূর্বক চাকরি হারানো এই চিকিৎসক ১৪ বছর পর গত সপ্তাহে বিএসএমএমইউতে কাজ শুরু করেন। গত ৬ জানুয়ারি বিএসএমএমইউতে যোগদানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি চাকরি হারানোর বিষাদময় স্মৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিকিৎসক হওয়ায় তাকে অস্ত্রের মুখে বিএসএমএমইউ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অবশেষে ১৪ বছর ৪ দিন পর গত ৬ জানুয়ারি এই চিকিৎসক ফের বিএসএমএমইউতে যোগদানপত্র গ্রহণ করেন।
গত বছর ১২ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বিএসএমএমইউর ৯৪তম সিন্ডিকেট সভা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পদচ্যুতি ও পদাবনতির বিষয়সমূহ নিষ্পত্তিকল্পে কোষাধ্যক্ষ নিম্নরূপ সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। সেখানে এক তালিকার প্রথমে ডা. কাজী মাজহারুল ইসলামের নামের পাশে বলা হয়েছে, “ডা. কাজী মাজহারুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জোরপূর্বক চাকরি থেকে অবসর গ্রহণে বাধ্য করা হয়।”
ডা. দোলন ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করেন, এক-এগারোর সরকারের সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিকিৎসা করানোর কারণে তিনি বিএসএমএমইউ থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ২০১০ এ ক্লিনিক্যাল অর্থোপেডিক্স এ পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করেন। পরের বছর এপ্রিলে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে প্রফেসর এন্ড হেড অব অর্থোপেডিক্স হিসাবে যোগদান করেন। কয়েক মাসের মধ্যে ভাইস প্রিন্সিপাল বা ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ফ্যাসিবাদী সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।
সংগ্রামের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, ২০১৫-২০১৭ দুই বছর পলাতক জীবন যাপন করতে হয়েছে। কখনো কখনো মানুষের বাসার ছাদেও ঘুমাতে হয়েছে। এই সংগ্রামের কোনো শেষ নেই। অবশেষে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে আবার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।
ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) সহযোগী অধ্যাপক থাকা অবস্থায় লগি বৈঠার আন্দোলন প্রতিরোধে সম্মুখ সারিতে তারা পাঁচজন নেতৃত্ব দেন। ১-১১ এর সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমান অসুস্থ হয়ে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন।
তারেক রহমানের চিকিৎসার যাদের ওপর অর্পিত হয় তাদের মধ্যে ডা. দোলন অন্যতম। তারেক রহমানকে আদালতে নিয়ে যাওয়া এবং ভয় ভীতি উপেক্ষা করে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা গণমাধ্যমে বলার মতো ডা. দোলন ছাড়া কেউ ছিল না। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে ছিলেন এই চিকিৎসক। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে। অস্ত্রের মুখে পিজি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। তিন মাস ঘরে বসে ছিলেন।
মন্তব্য করুন