তরুণ প্রজন্মের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী শিক্ষক ফোরাম।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত ‘তামাকবিরোধী শিক্ষক ফোরাম’ গঠন বিষয়ক সভায় এ দাবি জানান তারা।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত তামাকবিরোধী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক ছিলেন পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম এবং সহ-আহ্বায়ক ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তনুশ্রী হালদার ও বাংলা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক শামীমা নাসরীন।
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়ক নাসরিন আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিদিন তামাক সেবনের কারণে বাংলাদেশে ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান। এই মর্মান্তিক পরিসংখ্যান আমাদের জনস্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে এক গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। যদিও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) সহকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, তবুও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম মান অর্জনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় তামাক নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬ সংশোধনী দ্রুত পাস এবং কার্যকর করা অতি জরুরি। এর মধ্যে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের আমদানি-উৎপাদন-ব্যবহার ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০-৯০ শতাংশ বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ফোরামের আহ্বায়ক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, অল্প বয়সে ধূমপানে আসক্ত কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো জরিপ’ অনুযায়ী ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের হার বাংলাদেশ, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুতর সংকেত।
তামাকবিরোধী শিক্ষক ফোরামের উদ্দেশে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সীমা জহুর বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নানা কৌশলে যুবসমাজকে তাদের ক্ষতিকর পণ্যে আকৃষ্ট করছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে তারা একটি বড় কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন, প্যাকেজিং, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের টং দোকানে সহজলভ্যতা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিক্ষক সমাজকে আরও সক্রিয় হতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তামাক কোম্পানির নানান কূটকৌশল বন্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসের আশপাশে টং দোকানে তামাক বিক্রি বন্ধে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক শিবানী ভট্টাচার্য, সহ-আহ্বায়ক শাহনাজ পলি, অন্যান্য সদস্যসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
মন্তব্য করুন