টেকসই রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে গঠন করা হয়েছে ১১টি ছায়া সংস্কার কমিশন। এই ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং বিদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষারত বাংলাদেশি এক্সপার্টদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিষয়ের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্মিলন ঘটানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে রোববার (৫ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিএসআরএফ) এক কর্মশালার আয়োজন করে।
টেকসই রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে ১১টি ছায়া সংস্কার কমিশনের এটি ৪র্থ কর্মশালা। কর্মশালায় সঞ্চালনা করেন ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন। কর্মশালায় ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন তাদের টেকসই রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে ১১টি ছায়া কমিশন গঠন করা হয়েছে। এগুলো সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন কর্তৃত্ববাদী এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সে জন্য এই ১১টি কমিশন স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরবে। এভাবে বাংলাদেশকে নাগরিকবান্ধব একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।
সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনের বিপরীতে ছায়া সংস্কার কমিশনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার যে ধরনের সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সেগুলোতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এপ্রোচের প্রতিফলনের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তাই এই ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং বিদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষারত বাংলাদেশি এক্সপার্টদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে যাতে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিষয়ের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্মিলন ঘটে।
তাছাড়া সরকারের গঠিত কমিশনের সঙ্গে ছায়া কমিশনের মৌলিক পার্থক্যের জায়গা হলো সরকারের গঠিত কমিশনগুলো পৃথক পৃথকভাবে কাজ করছে এবং কমিশনগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে অপরদিকে ছায়া সংস্কার কমিশনের ১১টি কমিশন একটি অপরটির সঙ্গে সমন্বয় করে গত ৪ মাস যাবত কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এ ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের উদ্যোগে গঠিত রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনগুলোতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক্সপার্টরা সীমিতভাবে সংযুক্ত, যা এই কমিশনগুলোর সীমাবদ্ধতা। কর্মশালায় এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন- ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ড. এসএম আলী রেজা (অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), সহযোগী অধ্যাপক মেজবা-উল-আযম সওদাগর (চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)।
এছাড়া ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন- ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (অধ্যাপক, পলিটিক্যাল স্টাডিজ, শাবিপ্রবি), ড. শফিকুল ইসলাম (অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, চবি), মেহেদী হাসান সোহাগ (সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়), কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসাইন (সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়), সানভিন ইসলাম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়), শাহনেওয়াজ (সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, নোবিপ্রবি), সাদিয়া আফরিন (সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রমুখ।
মন্তব্য করুন