কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে দেশের ৩০ নাগরিক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিবৃতি প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছি যে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ওষুধ কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন। তার ভাষ্যমতে, এ সময় স্থানীয় জামায়াত কর্মী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০-১২ জন তাকে ধরে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে তাকে দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেয় তারা। ওই ঘটনায় উপস্থিত জড়িত আরও কয়েকজন হলেন- কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম, অহিদুর রহমান, পেয়ার আহমেদ, রাসেল, শহীদ, এমরান হোসেন, ফরহান হোসেন ও কামরান হোসেন। শুধু জুতার মালা পরিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, তা ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। সঙ্গত কারণেই তিনি প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছেন এবং তার নিরাপত্তাও বিপন্ন। তাই তিনি এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এ ঘটনা সম্পর্কে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তার উজ জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনার শিকার আব্দুল হাই অভিযোগ না করলেও ভিডিও দেখে পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করেছেন। এ ছাড়াও সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও তাদের এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এহেন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাবার উপযুক্ত ভাষা জানি না।
প্রতিবাদ জানাবার পাশাপাশি আমরা এরই মধ্যে শনাক্তকৃত অভিযুক্তদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই- ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা রাজনৈতিক আক্রোশ- কারণ যাই হোক এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এর বিরুদ্ধে দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সদা সক্রিয় থাকতে হবে। আমরা এও মনে করি, কুমিল্লার এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে, গত ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদী সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দলীয়করণের মাধ্যমে যেভাবে পদদলিত করেছে তার দায় পতিত সরকারের প্রধান ও তার সহযোগীদের। তাই বলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কোনো প্রকার অসম্মান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জোর দাবি জানাই। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুজনকে জামায়াতের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। আমরা মনে করি, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি ও সম্মান বিষয়ে জামায়াতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং তার বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের প্রকাশ্য ঘোষণা যেমন অপরিহার্য সে সঙ্গে ১৯৭১ সালে তাদের অবস্থানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বাঞ্চনীয়।’
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
১. আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
২. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।
৩. খুশি কবীর, সমন্বয়ক, নিজেরা করি।
৪. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি।
৫. ড. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৬. ড. ফিরদৌস আজীম, অধ্যাপক, ইংরেজি ও মানবিক বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়।
৭. জেড আই খান পান্না, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
৮. ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি।
৯. শিরীন পারভীন হক, সদস্য, নারীপক্ষ।
১০. ড. জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১১. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১২. অ্যাড. তবারক হোসাইন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
১৩. অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
১৪. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি।
১৫. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী।
১৬. ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সংগীতশিল্পী।
১৭. সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক ও গবেষক।
১৮. রেহনুমা আহমেদ, লেখক।
১৯. তাসনিম সিরাজ মাহাবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২০. ড. ফসটিনা পেরেইরা, আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২১. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ।
২২. অ্যাড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, এমএসএফ।
২৩. মনীন্দ্র কুমার নাথ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
২৪. পাভেল পার্থ, লেখক ও গবেষক।
২৫. অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২৬. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২৭. ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২৮. অ্যাড. নাজমুল হুদা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
২৯. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী।
৩০. সাঈদ নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি।
মন্তব্য করুন