ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মোর্শেদুল আলমকে আটক করা হয়েছে। তাকে আটকের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মোর্শেদুলের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। সরকার প্রকাশিত গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম নেই তার। তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশও রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কাফরুল থানা পুলিশ তাকে আটক করেছে।
মোর্শেদুলের পিতার নাম মৌলভি মতিউর রহমান এবং মাতার নাম করিমুন্নেছা। মোর্শেদুলের জন্ম ২৪ মার্চ ১৯৬৬ সালে। তিনি মিরপুর-১৫ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
ভুয়া পরিচয়ের তথ্য
১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তার বয়স ছিল ৫ বছর ৮ মাস ৭ দিন (সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স কমপক্ষে ১২ বছর ০৬ মাস হতে হবে)।
তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির জমি অমুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতে দমন কমিশনে।
জানা গেছে, তিনি কমপক্ষে ১০০ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে সমিতির সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত করে প্রতিটি সদস্যপদ ৫ (পাঁচ) লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এবং গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। তার আত্মীয়স্বজনদের সমিতির সদস্যপদ নামে-বেনামে বরাদ্ধ দেন এবং পরে তাদের নামে বরাদ্ধ পাওয়া ফ্ল্যাটগুলো বর্তমান দামে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এসব অর্থ দিয়েই তিনি কানাডাতে কিনেছেন বিলাস বহুল বাড়ি, যেখানে তার সন্তানরা থাকেন। রাজধানীতেও রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। এর মধ্যে ধানমন্ডিতে ১টি, সেগুনবাগিচায় ১টি ও রামপুরার বনশ্রীতে রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট।
মিরপুরের বিজয় রাকিন সিটিতে নামে-বেনামে অন্তত ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। রাকিন টাওয়ার থেকে কিনেছেন ৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের কমার্শিয়াল স্পেস।
গুলশান-২ এ অবস্থিত ‘দ্য রয়েল প্যারাডাইস’র কিছু অংশ ‘দ্য ফাইভ ট্রেডিং লিমিটেড’র নামে ভাড়া নিয়েছিলেন। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি।
মোর্শেদুল আলমসহ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতির রায়হান উদ্দিন আহম্মেদ, আব্দুল্লাহ-আল মামুন (লাভলু), শেখ মো. শাহেদুজ্জামান প্রমুখ ব্যক্তিদের দ্বারা সমিতির অন্য সদস্যরা হয়রানির শিকার হন কিন্তু ভয়ে কিছুই বলতে পারেন না তারা।
আটকের বিষয়ে কাফরুল থানার ওসি তৈয়বুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করে হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন