বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের খবর যুক্তরাজ্যের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই কমিউনিটির বিভিন্ন পত্রিকা, সভা সমাবেশ ও আচার অনুষ্ঠানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এটি। তারা বলছেন, এতে ব্রিটেনে বাংলাদেশিরা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এটি বাংলাদেশি কমিউনিটির রাজনীতিবিদদের জন্যও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ছাড়াও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
এমন পরিস্থিতিতে কমিউনিটির বেশিরভাগ মানুষই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আবার টিউলিপের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভের ডাকও দিয়েছেন কেউ কেউ।
তবে টিউলিপ ভক্তরা বলছেন, এটি বর্তমান সরকারের একটি প্রতিহিংসামূলক অপপ্রচার। যদিও এরই মধ্যে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের নৈতিকতা বিষয়ক একটি দল। তবে তার আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার টিউলিপের ওপর আস্থা থাকার কথা ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে কমিউনিটির অন্যতম মুখপত্র ‘বাংলা সংলাপ’-এর সম্পাদক মো. মোশাহিদ আলী বলেন, এ ঘটনায় ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে ব্রিটেনের রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের যে একটা সম্ভাবনা রয়েছে তা নষ্ট হবে। ব্রিটিশরাসহ অন্যান্য দেশ বা কমিউনিটি আমাদের ওপর আস্থা হারাতে পারে। ব্রিটিশ সরকারের উচিত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকও মনে করেন রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে তার পুরো পরিবার জড়িত। তার বরখাস্ত এখন সময়ে দাবি।
টিউলিপের দল লেবার সদস্য ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আতিয়ার রসুল কিটন বলেন, এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ। শেখ পরিবার ও টিউলিপের উজ্জ্বল রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দেখে বিরোধীরা হেনস্তা করতে এমন অভিযোগ তুলেছে।
টিউলিপের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার এমনটা করছে বলে মনে করেন লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি ও সাবেক ছাত্রনেতা মো. তোহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই অভিযোগ ইউনূস সরকারের একটি প্রতিহিংসা মাত্র।
যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন বলেন, ব্রিটেনের রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের যে সম্ভাবনা সেটি টিউলিপ নষ্ট করে দিয়েছেন। এটি বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্য নেতাদের রাজনীতির মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
টিউলিপ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের হাইকোর্ট।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, টিউলিপ সিদ্দিক ১০ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক চুক্তির 'দালালি' করতে সাহায্য করেছেন। এ চুক্তিটি ২০১৩ সালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটমের সঙ্গে করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা রেহানা সিদ্দিক ও ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক। সে সময় টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন একজন লেবার কাউন্সিলর।
এ চুক্তি থেকে টিউলিপ রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। টিউলিপের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ছাড়াও বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহারের তথ্য গোপন করার অভিযোগে ব্রিটেনে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন। যেখানে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক কায়ছারুল ইসলাম সুমন মনে করেন, অভিযোগটি বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই পরিবারটি বাংলাদেশের মতো ব্রিটেনেও কলঙ্কিত রাজনীতি শুরু করেছে।
এতসব কিছুর পর টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রী পদে থাকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। উইট ইস্টের টোরি এমপি জো রবার্টসন বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে অভিযোগ গুরুতর ও এ তদন্তের ফলে সিদ্দিক তার মন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন কিনা সেটি জানা প্রয়োজন।
এ বছর যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লড়ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ৩৪ প্রার্থী। এদের মধ্যে টিউলিপ ছাড়াও জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরও তিন রাজনীতিবিদ।
তারা হলেন- রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, ড. রূপা হক ও আপসানা বেগম। এরা সবাই লেবার পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
তাদের মধ্যে রুশনারা টানা পঞ্চমবারের মতো, টিউলিপ ও ড. রূপা টানা চতুর্থবারের মতো এবং আপসানা টানা দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হিসেবে জয়ী হন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দেশটিতে অনেক বাংলাদেশি নির্বাচিত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন