বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ব্যবসা, বাণিজ্য এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের বিনিময় বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন।
ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মিশরের রাজধানী কায়রোর একটি হোটেলে বৈঠকে দুই নেতা চিনি শিল্প এবং ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস এবং শরীফ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সার্কের পুনরুজ্জীবন; যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষিত পররাষ্ট্র নীতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. ইউনূস ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার’ বাস্তবায়ন এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, সংস্কারের ওপর সংলাপ করার জন্য একটি ঐক্যমত্য গঠনকারী কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অধ্যাপক ইউনূস তার পাকিস্তানি প্রতিপক্ষকে ১৯৭১ সালের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য অনুরোধ করেন যাতে ঢাকা ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পারে।
তিনি বলেন, সমস্যাগুলো বারবার আসছে। আসুন আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য সেই সমস্যাগুলো সমাধান করি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের সাথে ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান করা হয়েছে। কিন্তু যদি অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যা থাকে, তবে তিনি সেগুলো দেখে খুশি হবেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য’ বিষয়গুলো চিরতরে সমাধান করা ভালো হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ঢাকা এবং ইসলামাবাদের মধ্যে একটি কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের আহ্বান জানিয়ের বলেন, আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সত্যিই উন্মুখ। তিনি আঞ্চলিক সংস্থার একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করার জন্য সার্ক এবং বাংলাদেশকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করেন।
ড. ইউনূস বলেন, সার্ক পুনরুজ্জীবন করা তার একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমি সার্কের ধারণার একজন বড় ভক্ত। আমি এই বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলছি। আমি সার্ক নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন চাই, যদিও তা কেবল একটি ছবির জন্যই হোক কারণ এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চিনিকলগলোকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং আরও বলেছেন যে, ঢাকা এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে। প্রায় এক দশক আগে পাঞ্জাবে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই বিশ্বমানের হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে পারি।
অধ্যাপক ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে তার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান ও আশা করেন যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং অধ্যাপক ইউনূসের বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সিদ্দিকী ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া সফরে যাওয়ার সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শরীফও ড. ইউনূসকে তার সুবিধামত তাদের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
মন্তব্য করুন