আবারও আলোচনায় এসেছে এস আলম গ্রুপ। ফেঁসে যাচ্ছেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের (আইবিবিএল) সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম। মোটা অংকের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, আহসানুল আলমের নেতৃত্বে শুধুমাত্র ব্যাংকটির একটি শাখা থেকে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। দূর-সম্পর্কের খালাতো ভাই ও এস আলম গ্রুপের বেতনভুক্ত কর্মচারী মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরীকে সামনে রেখে মাত্র তিন বছরে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রুপটি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিমের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যেখানে বলা হয়েছে, টাকা লুটপাটে সহযোগিতা করেন ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন এমডি ও পরিচালকসহ ৩৪ ব্যাংকসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এসব কর্মকর্তার পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলিয়ে মোট ৫৮ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে।
দুদকেের অনুসন্ধান টিম কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছে ও মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছে। এরপর বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এস তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দুদকের ওই কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে মামলা দায়েরের অনুমোদনের পর মামলা হয়েছে। যেখানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের (আইবিবিএল) সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান, এমডি, একাধিক পরিচালকসহ ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় যাদের নাম রয়েছে- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, ড. মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক পরিচালক খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান ও সাবেক নমিনী পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
এছাড়া আসামি করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসার্চ অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, ব্যাংকটির বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাকতাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাকতাই শাখা প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী এবং দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামি- মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মালিক মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং কর্পোরেশানের মালিক মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সে মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সর মালিক এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউজের মালিক এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউজের মালিক ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের মালিক আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউজের মালিক মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউজের মালিক মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী, ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক কাজী মেজবাহ উদ্দিন, সোশ্যাল ট্রেড সেন্টারের মালিক আলী জহুর এবং শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী চৌধুরী।।
প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চাকতাই শাখাসহ প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে জব্দ করা রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা যায়, মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২১ সালের ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায় ৮৯০ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করে হাজার কোটি এবং ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরে ১১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়। যার মধ্যে আসল ৯৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও মুনাফা ১২৫.৮০ কোটি টাকাসহ ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে ৫৬ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) এবং ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন