কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হতো গুমের শিকার ব্যক্তিদের’

নূর খান লিটন। ছবি : সংগৃহীত
নূর খান লিটন। ছবি : সংগৃহীত

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যখন হত্যা করা হয়; তখন তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয় অথবা কাউকে পলিথিন দিয়ে মুখ মুড়িয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। সেসব মরদেহ পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে বেঁধে নদীর মাঝখানে ফেলে দেওয়া হতো।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের তদন্ত শেষে এমন ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন। সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমরা যে পরিমাণ সিক্রেট সেল দেখেছি, যে পরিমাণ বন্দিরা ফেরত এসেছে, তাদের বয়ান থেকে আমরা যা জেনেছি তা- ভয়াবহ। বন্দিদের রাখা হতো ৪ ফিট লম্ব আর ৩ ফিট চওড়া ছোট্টো ঘরে। সেখানে রাতদিনের তফাৎ বোঝা যেত না। বন্দিরা তাদের খাবার দেখে দিনরাতের হিসাব মেলাতেন। বন্দি ঘরের দেয়ালে গুহামানবদের মতো আঁচড় দিয়ে বিভিন্ন কথা লিখে রাখতেন বন্দিরা। বাথরুমের চেয়েও ছোট সেসব বন্দিঘর। সেখানে আলো-বাতাস সীমিত পরিমাণে প্রবেশ করানো হতো, যাতে সেখানকার বন্দিরা রাতদিনের পার্থক্য না বোঝে। যখন খাবার দেওয়া হতো, বন্দিরা খাবার দেখে শনাক্ত করতে পারতেন এখন দিন না রাত। সকালের নাস্তায় সাধারণত রুটি বা খিচুড়ি দেওয়া হতো, যা দেখে বুঝতো তারা একটি দিন পার করেছে। আমরা গুহামানবের কথা শুনেছি, যেখানে তারা দেয়ালে চিত্র আঁকতো, সংকেত লিখে রাখত।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি বন্দিরা থালা দিয়ে বা ইটের টুকরা দিয়ে দেয়াল আঁচড় কেটে দিনের হিসাব রাখত। এভাবে আমরা ১৮২ দিন থেকে ৩০০ দিনের মতো ডেট পেয়েছি। অস্পষ্ট কয়েকটি মোবাইল নম্বর এবং দুএকটি নামও পেয়েছি। মানুষ মৃত্যুর আগে যে আকুতি জানাই- সেসব মর্মস্পর্শী বার্তাও পেয়েছি। যেমন- কেউ লিখেছেন ‘আই লাভ মাই ফ্যামিলি’। কেউ লিখেছেন- ‘বিজয় সুনিশ্চিত’। কেউ লিখেছেন- ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো’ আবার কেউ কোরাআনের আয়াত লিখে রেখেছেন।

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে নূর খান লিটন বলেন, পাশাপাশি মানুষকে কীভাবে নির্যাতন করা হতো তার কিছু সিনড্রোম (নমুনা) আমরা পেয়েছি। কাউকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যখন হত্যা করা হয়; তখন তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয় অথবা কাউকে পলিথিন দিয়ে মুখ মুড়িয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। সেসব মরদেহ পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে বেঁধে নদীর মাঝখানে ফেলে দেওয়া হতো।

নূর খান লিটন বলেন, লাশ ফেলে দেওয়ার কিছু কিছু জায়গা আমরা দেখেছি। যেমন পোস্তগোলায় একটা নৌকা রাখা ছিল, যেটা সুন্দরবনের দস্যুদের কাছ থেকে উদ্ধার করা। পরে সে নৌকাটি ঢাকায় নিয়ে এসে গুমের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হতো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কর্মস্থলে ‘তুই-তুমি’ সম্বোধন বন্ধের সুপারিশ কমিশনের

কমিটিতে আসার এক মাসের মধ্যেই ছাত্রদলের ২ নেতাকে শোকজ

ঢাকাসহ ৬ বিভাগে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

বিশ্লেষণ / লেজার অস্ত্রে কেন এত ঝুঁকছে ইরান

হলে কড়া গার্ড, গণিত পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় কেন্দ্র ভাঙচুর

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি পেছাল

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি আজ

কুমিল্লায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রদল-এনসিপির যৌথ মিছিল

চাকরির নামে ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, মেডিকেল অফিসার আটক

সপ্তাহে ১ দিন কাজ, ৬ দিন ছুটি—এই অবিশ্বাস্য সুযোগটি কোথায়?

১০

দুর্নীতির সংবাদে সাংবাদিক তলবে সিআরইউ’র নিন্দা 

১১

মায়ের বুক খালি করা রাজনীতি আমরা চাই না : ধর্ম উপদেষ্টা

১২

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফা বৈঠক আজ 

১৩

মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা, গুলিতে যুবক নিহত

১৪

সেকেন্ডেই সব ধ্বংস, কেন এই বোমার তাণ্ডব চালাল চীন

১৫

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এসি ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পদক্ষেপ

১৬

কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ এক গ্রামের ৬ জন

১৭

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস আজ

১৮

সংবাদ সম্মেলন করে আ.লীগের কার্যালয়ের দখল ছাড়ল বিএনপি

১৯

ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করছে চীন  

২০
X