ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেছেন, গত ১৬ বছর বাংলাদেশে মানবাধিকার বলতে কিছুই ছিল না। শেখ হাসিনার আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জিয়া পরিবার।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এক মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মানবাধিকার ভাবনা ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এ মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মানবাধিকার সেল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারি।
ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে জিয়া পরিবারের ওপর বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে যে নিপীড়ন নির্যাতন হয়েছে, সে কথা। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত ব্যবহারের মাধ্যমে স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী রায় দিয়ে বছরের পর বছর কারান্তরীণ করে রাখে আমাদের মাতৃতুল্য প্রিয় নেত্রীকে। রাজনৈতিক কার্যালয়ের দুই দিকে বালুর ট্রাক দিয়ে ঘিরে রেখে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে দীর্ঘদিন। একটি রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছলে এমন আচরণ করতে পারে একজন বয়োজেষ্ঠ্য নারীর সঙ্গে, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনাপ্রধানের সহধর্মিণী একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে।
মোর্শেদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের আরেক কালো অধ্যায় ১/১১ এর মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র মরহুম আরাফাত রহমান কোকো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। একজন সজ্জন, ক্রীড়া সংগঠক কোকো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে আর ওনাকে নিজ দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। তাকে করা হয়েছিল পরিবার বিচ্ছিন্ন। ওই নিপীড়নের ধকল সইতে না পেরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, এক বুক অভিমান এবং কষ্ট নিয়ে।
তিনি বলেন, বিএনপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যার জন্য ওই খুনি হাসিনার ইন্ধনে ১/১১ এর সরকার রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর যে বর্বরতা চালিয়েছে, তা মধ্যযুগকেও হার মানায়। তার মেরুদণ্ডের হার ভেঙে দেয় নরপিশাচরা। দিনের পর দিন অত্যাচার চালিয়ে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আদালতকে ব্যবহার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা। কোনো প্রকার সাক্ষি প্রমাণ ছাড়াই ফরমায়েসি আদালত তাকে একাধিক মামলায় মৃত্যদণ্ড পর্যন্ত রায় দেয়। তিনি যাতে দেশে আসতে না পারেন, মায়ের বুকে যেন ফিরতে না পারেন, সেজন্য তার পাসপোর্টটি নবায়ন পর্যন্ত করতে দেয়নি। তার স্ত্রী বিশ্বখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমানকে পিজি হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করে হাসিনা সরকার। আমাদের সবার প্রিয় ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের পাসপোর্ট পর্যন্ত দেয়নি ওরা। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে খুনিরা একমাত্র ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর তার জানাজায়ও অংশ নিতে দেওয়া হয়নি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।
অধ্যাপক মোর্শেদ নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে চাকরিচ্যুতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কী অপরাধ ছিল আমার? কেন আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পদ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল? আমি কি মিথ্যা বলেছিলাম? আমি একটি সত্য কথা লিখেছিলাম, আমি লিখেছিলাম- জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। এই অপরাধে আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বানানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমার অসুস্থ স্ত্রী, শিশু কন্যা, আমার বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদের মলিন মুখ দেখেছি। আমার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার আদরের শিশু কন্যার মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছিল। আমাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার মেয়ে, ওর সহপাঠীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। আমার মেয়ে অরুণথিয়া ওর বন্ধুদের কাছে বাবা কী করেন এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি।
নির্যাতিত এই শিক্ষক আরও বলেন, বৃদ্ধ বাবাকে হারিয়েছি, দুই বছর হলো। অসুস্থ বাবার পাশে থাকতে পারিনি। মিথ্যা মামলায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে, বছরের পর বছর। প্রতি রাতে বৃদ্ধা মায়ের গোমট কান্না হয়ে ঝরেছি। মাকে বুকে জড়িয়ে প্রিয় মুখের হাসি দেখতে দেয়নি ওরা। মানবাধিকার, সেটি কি ছিল বিগত ১৬ বছরের বাংলাদেশে?
তিনি বলেন, বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এই আলোচনা সভার মাধ্যমে আমি এসব চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার চাই। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই এসব অপরাধের বিচার করতে হবে। না হলে ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর থেকে যে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তা অর্থহীন হবে। আমার প্রিয় সন্তানের, প্রিয় সহকর্মীর রক্ত বৃথাই রয়ে যাবে। মানবাধিকার দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান যেন নিছক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। আগামী দিনের বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তিকে যেন আমার মতো তার মানবাধিকার হরণের কষ্টের কথা বলতে না হয়, সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
মন্তব্য করুন