বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে হাত-পা হারানো লোকজন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা সংগঠন মায়ের ডাকের আয়োজনে গণজমায়েতে যোগ দিতে জড়ো হন তারা।
সোহরাওয়ার্দীতে ঘুরে দেখা যায়, উপস্থিত হওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে কারও পা নেই, কারো নেই হাত। আবার কারো পায়ে ব্যান্ডেজ। কেউ ক্র্যাচে আবার কেউ এসেছেন প্রিয়জনের কাঁধে ভর করে। এদের মধ্যে অনেকে ছিলেন দীর্ঘদিন গুমের শিকার। শুধু তারাই নন, বরং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ভিন্নমতের কারণে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছেন।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি সাধারণ একটি মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে হঠাৎ করেই পুলিশ গুলি করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ে বুলেট লাগে। আমার কোনো অপরাধ ছিল না। তারপরও কেন আমাকে গুলি করা হলো সেটি জানি না। এখনো এই পা নিয়ে আমি কষ্ট করছি। কোনো অপরাধ না করেও সারা জীবন আমাকে কষ্ট করতে হবে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
আব্দুস সোবহান নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে খুব কাছে থেকে আমাকে গুলি করা হয়েছে। অথচ আমি কোনো অপরাধই করিনি। শুধু তাই নয়, এরপরও দীর্ঘদিন আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা উচিত নয়।
এ সময় মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে জুলুমের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এখানে জড়ো হয়েছেন। আওয়ামী সরকারের দ্বারা গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। এখান থেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম, জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত নির্বিচারে নির্যাতন চালানো হয়েছে। অসংখ্য মানুষ এখনো পরিবারের কাছে ফেরেননি। এমনকি তারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন সেটিও জানা যায়নি। আমরা গুম হওয়া মানুষজনের অবস্থান জানতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে যে জুলুম-নির্যাতন ভিন্ন মতের মানুষের ওপর চালানো হয়েছে তার বিচার করতে হবে।
গণজমায়েতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন