বিগত সরকারের সময়ে দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আইডিইবির মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় এ কথা বলেন তিনি। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন এই আলোচনাসভার আয়োজন করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা: গড়বে আগামীর শুদ্ধতা'।
আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি এক্সসেপটেড নর্মে পরিণত হয়েছিল। অবৈধ টাকা নিয়ে গর্ব করত দুর্নীতিবাজরা। কেন হয়েছিল, কারণ দুর্নীতির বিচার হতো না। দুর্নীতি যে এত খারাপ তা ভাবা হতো না। বিচার হতো খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়া ৩ কোটি টাকা একটা জায়গায় রেখেছিল, ১টা টাকাও তিনি খরচ করে নাই। সেই অপরাধে তাকে দশ বছর জেলে দিয়েছিল। দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল।
তিনি বলেন, কমিশন যাওয়ার আগে বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়ে গেছে। এখন আপনারা তদন্ত করে দেখান তাদের দ্বারা আপনাদের অন্তর কলুষিত হয়নি। ভালো পরিবেশ পেলে আপনারাও কাজ করতে পারেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি একটি ফ্ল্যাটের নামজারি করতে গিয়েছিলাম। আমার কাছে নামজারিতে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিল। বাবার কেনা, অন্য একজন নামজারি করে ফেলেছে। ওটা ঠিক করতে ১০ লাখ টাকা ঘুষ লাগবে। এই অর্ডার কি শেখ হাসিনা দিয়েছিল। পলিটিক্যাল লিডারদের দোষ দেব তার আগে নিজেদের দিকে তাকান। নিজেরা আগে সৎ হন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। নিজে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু আমরা উল্টোটা করি, দুর্নীতিবাজদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করি। বিগত ১৫ বছরের দেশে এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল যে বড় বড় দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্র কাঠামো দখল করে ফেলেছিল। তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করত। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামোতে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হতো।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীতে আর কোনো দেশ আছে যেখানে প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়? এবং বলে দেওয়া হয় এ বিষয়ে দুদক কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, তারুণ্যের অজেয় শক্তি স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে আর একবার। তরুণদের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে। তার মধ্যে দুদক অন্যতম। দুদক সংস্কারে কমিশন কাজ করছে। তবে একজন ব্যক্তি যখন দুদকে চাকরি নেবে তখনই তো তার ভাবা উচিত যে তার দায়িত্ব দুর্নীতি ঠেকানো। এই প্রতিষ্ঠানে সংস্কার করতে হবে কেন? দুর্নীতির এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর হতে পারে?
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছি। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে যা তথ্য পাচ্ছি তাতে আমি বিব্রত। দুর্নীতি, অবিচার, অনাচার দুর্নীতি দমন কমিশনের নীতি হয়ে গেছে। আমি সত্যি বিব্রত হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশে কমিশন পদত্যাগে উভয়সংকট তৈরি হয়েছে। দুদকের সব কাজ থেমে গেছে। সংস্কার কমিশনের শীর্ষ ম্যান্ডেট কমিশন নিয়োগ। তাই সংস্কারের কাজ শেষের আগেই যদি আগের মতো কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে সেই একই অবস্থা হতে পারে।
এ ছাড়া তিনি বলেন, দুদক একা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যদি আমরা একটা আদর্শ কমিশন পেয়ে যাই। স্বপ্নের কথা বলছি। পেলেও দুদক দায়িত্ব পালন করতে পারবে না যতদিন না আমাদের আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ও রাজনৈতিক ইতিবাচক পরিবর্তন না হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন ও স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
এর আগে সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা এবং দুদকের পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সংগীত গেয়ে, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে কমিশনের সকল মহাপরিচালককে সঙ্গে নিয়ে সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। পরে দুদকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মন্তব্য করুন