বাসস
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ পিএম
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছোট্ট বসতঘর বানানোর স্বপ্ন আর কোনোদিনই পূরণ হবে না শহীদ সানির

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ সানি আহমদ। ছবি : সংগৃহীত
ছোট্ট বসতঘর বানানোর স্বপ্ন আর কোনোদিনই পূরণ হবে না শহীদ সানির

নির্জন টিলায় শুয়ে আছেন সানি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন সানি আহমদ। টিলাটি এত নির্জন, দিনের বেলায়ই ভয় হয়। সানিদের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট কুমারপাড়া গ্রামে।

উপজেলা সদর থেকে যেতে হয় পাহাড়-টিলা পেরিয়ে। ভাইবোনের মধ্যে সানি দ্বিতীয়। ওর বড় বোন রিমার বিয়ে হয়ে গেছে। সানির থেকে বয়সে ছোট বোন ইমরানা বেগম রুফি, রুলি আক্তার রুহি, জুলি আক্তার জুঁই এবং সব ছোট ভাই সামি। সানির খুব শখ ছিল পড়ালেখা করবে। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এরপর তার হৃদরোগ। কাজ করতে তো কষ্ট হয়, মাঝে-মধ্যে কথা বলতেও কষ্ট হয়। এজন্যে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে সানি কাজে নামে।

সংসারের অভাব ঘুচানোর জন্যে বছর কয়েক ধরে সানি রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করছিল।

প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস হলেও সেখানে সানিদের নিজস্ব বসত ভিটেও নেই। তারা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। সানির স্বপ্ন ছিল কাজ করে করে তিনি এক টুকরো বসতভিটে কিনবেন। সে ভিটায় থাকার ঘর বানাবেন। কিন্তু সানি পৌঁছাতে পারেননি তার স্বপ্নের কাছাকাছি। তার আগেই নিষ্ঠুর বুলেট কেড়ে নিল তার প্রাণ।

সানির স্বপ্নের কথা বলছিলেন সানির বাবা কয়সর আহমদ। তিনি বললেন, ছেলের লাশ দেখার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার নির্দোষ ছেলেটাকে ওরা গুলি করে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

সানির ছোট চাচা রাজু আহমদ জানান, সানি তার সন্তানের চেয়েও প্রিয়। সেই শৈশব থেকেই সানি তার আমার সাথে ঘুমাত। ঘটনার দিন ৪ আগস্টও সানি আমার সাথে একই খাটে ঘুমিয়েছিলে। ভোরে তিনি ক্ষেতের কাজে চলে যান। পরে সানিও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সেই সানি আর জীবিত ফিরে আসেননি, এসেছে তার লাশ।

তিনি আরও জানান, সেদিন আমি ক্ষেতে কাজ করছিলাম। দুপুরের দিকে গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে কীসব ঘোষণা আসছিল, তেমন খেয়াল করেনি। বাড়ি ফেরার সময় প্রতিবেশীরা তার মৃত্যুর কথা জানায়।

রাজু আহমদ বলেন, আন্দোলনের সময় সানি মিছিলে অংশ নিয়েছিল। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে সানি শহীদ হয়। মিছিলটি হয়েছিল গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন রাস্তায়।

তিনি আরও বলেন, তিনি ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছিলেন। এলাকার মানুষ বলেছেন, সানি এলাকার মানুষের সাথে মিছিলে ছিলে। সানি গুলিবিদ্ধ হবার পর রাস্তার পাশের একটি বাড়ির কচু গাছের ঝোপে পড়ে যায়। পরে তাকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার চাচা আক্ষেপ করে বলেন, ভূমিহীন পিতার জন্য সানি ছোট্ট একটি ভিটাতে ঘর বানাতে চেয়েছিলে। কিন্তু তার সেই স্বপ্নপূরণ হলো না। সানি আর ফিরে আসবেন না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবারও ব্যর্থ মুশফিক, ৭৩ রানে এগিয়ে থেকে শেষ সেশন শুরু টাইগারদের

ভাইবোনকে হত্যার দায়ে আরেক ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড

টেস্টে টাইগারদের হয়ে মুমিনুলের নতুন রেকর্ড

লাইভে এসে নিরাপত্তা চাইলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক

আসুন আমরা সাহসী হই : প্রধান উপদেষ্টা

মেঘনার সহযোগী সমির ফের ৪ দিনের রিমান্ডে

‘এই প্রজন্মের সঙ্গে লড়াই করে হাসিনার ফিরে আসা সম্ভব না’

বিশ্লেষণ / যুক্তরাষ্ট্রকে কী একা সামলাতে পারবে ইরান?

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই পৃথিবী গঠনের আহ্বান ড. ইউনূসের

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের পাশে ছাত্রদল 

১০

নির্বাচনের আগে হাসিনার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে : এ্যানি

১১

দেশের বাজারে হুয়াইহাই ইলেকট্রিক স্কুটারস আনছে ন্যামস মোটরস

১২

গত ৯ বছরে ঢাকার মানুষ নির্মল বাতাস পেয়েছে মাত্র ৩১ দিন

১৩

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আরও ছয় মাস সময় পেল টাস্কফোর্স

১৪

থাইল্যান্ডে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেলেন হাবিপ্রবির ২২ শিক্ষার্থী

১৫

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে মেসির শোকবার্তা

১৬

আজ থেকে কার্যকর সোনার সর্বোচ্চ দাম

১৭

অহনা-সিমান্তের ‘ভাঙ্গা সংসার’

১৮

কুমিল্লায় আ.লীগের পক্ষে মিছিল, কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার ১২

১৯

পাওয়া গেল পলকের হারানো সোয়েটার

২০
X