সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেছেন, আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রতিরোধ না করতে পারি তাহলে এ পরিবর্তন সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেবে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী সমাবেশের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সমাবেশ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ধরার উপদেষ্টা ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন- এপিএমডিডি ফিলিপাইনের সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সমাবেশ আয়োজক কমিটি এবং ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
শারমীন মুরশিদ বলেন, আমরা যে সভ্যতা গড়ে তুলেছি তা অত্যন্ত সংকটে নিমজ্জিত। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এই সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই সরকার চায় দেশটা যেন একটা সবুজ দেশ হয়। আমরা আইনের শাসন চাই। পরিবেশ, নদী রক্ষায় আইন প্রয়োগ করব। পরিবেশ ধ্বংস, মানুষ ধ্বংস, শিশু ধ্বংস সবকিছুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছে।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমরাদের কৃষি, খাদ্য এবং জীবন-জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। আমরা দেখেছি এবার ইলিশ মাছের ডিম কম এসেছে। এর পেছনে কারণ হিসাবে দেখা গেছে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া। নদীগুলো ভরাট-দখল হয়ে যাওয়ার ফলে মাছের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। হাওরের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই রাস্তাগুলো আমাদের ভাঙতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনের চেয়ে আমাদেরকে কৃষির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে এগুলো আমাদের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতিই বয়ে আনবে। তাই অবশ্যই টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাকে এখন আর দেখি না। ইতোমধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে এবং এর জন্য আমাদের কোনো দায় নেই। পশ্চিমা এবং উন্নত দেশগুলো জলবায়ু উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। যেসকল দায়ী দেশগুলো উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখছে তাদেরই ক্ষতিপূরণ করতে হবে। আমাদেরকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কি নোট স্পিকার লিডি ন্যাকপিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি এবং খাদ্যকে প্রভাবিত করছে যা অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে পৃথিবীর দক্ষিণের দেশগুলোতে। আমরা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সমস্যার সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছি। জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় তহবিল জরুরি। কপ-২৯ এই তহবিল আদায়ে জন্য ব্যর্থ হয়েছে। এই তহবিল তৈরির জন্য আমাদের অনেক শক্তিশালী হয়ে কাজ করতে হবে।
তারা ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কাইনান হগটন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নতুন যে জ্বালানি নীতি গ্রহণ করছে তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে হবে। এর জন্য জীবশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর করতে হবে। আমরা এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।
সমাবেশ আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ নামের এমন আয়োজন পৃথিবীতে এইটাই প্রথম। আমরা বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো এটি আয়োজন করছি। এই আয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি। তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) চিফ এক্সিকিউটিভ মো. শামসুদ্দোহা, সেন্টার ফর রিনিউএবল এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের (সিআরইএসএল) চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী এবং শরিয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (এসডিএস) নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম প্রমুখ।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ডোনা লিসেনবি, সিইও, রিভারফক্স এনভায়রনমেন্টাল; আয়ান রিভেরা, ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস (পিএমসিজে); সাঈদ বেলুচ, সাধারণ সম্পাদক, পাকিস্তান ফিশারফোক ফোরাম; ইয়ুকি তানাবি, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, জেএসিএসইএস; আয়ুমি ফুকাকুসা, এফওই জাপান (ভার্চুয়াল); মালো তাবুইস নুয়েরা, সিনিয়র এনার্জি ক্যাম্পেইনার, এপিএমডিডি; মাকিকো আরিমা, জাপান ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার, অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল ও ফসিল ফ্রি জাপান।
মন্তব্য করুন