২০২৩ সালে সরকারি ও বেসরকারি খাতে সেবা নিতে গিয়ে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ঘুষ দেলদেন হয়েছে। এর মধ্যে ভূমি খাতে সেবা পেতে বেশি আর জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তা পেতে কম ঘুষ দিতে হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক সেমিনারে এ চিত্র উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, ভূমি খাতে সেবা ঘুষ দিতে হয়েছে ২ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আর জলবায়ু সহায়তা পেতে ২৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়াও বিচারিক সেবা পেতে ২ হাজার ৩৫৭ কোটি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে সেবা পেতে ১ হাজার ৫৭০ কোটি, পাসপোর্ট খাতে সেবা পেতে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবি জানায়, বাংলাদেশের খানাগুলোর সেবা গ্রহণে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সেবা খাতে দুর্নীতির প্রকৃতি ও মাত্রা নিরূপণ করতে গত ১৩ মে থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
টিআইবির দশম এই জরিপে সারা দেশের ৮ বিভাগের গ্রাম ও শহরাঞ্চল মিলিয়ে বিভিন্ন পেশার ১৫ হাজার ৫১৫টি খানা (পরিবার) অংশগ্রহণ করেন। এতে ১৮টি সেবা খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে আনা হয়েছে।
এগুলো হলো- পাসপোর্ট, বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক সেবা, ভূমি সেবা, স্বাস্থ্য (সরকারি), স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), গ্যাস, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা (সরকারি ও এমপিওভুক্ত), কৃষি, কর ও শুল্ক, বিমা, ব্যাংকিং, এনজিও (প্রধানত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ), অন্যান্য (এমএফএস, ওয়াসা, অনলাইন শপিং ইত্যাদি)।
টিআইবি জানিয়েছে, এসব খাতের সেবা গ্রহণে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ, শহরাঞ্চলে ৬৯ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে। এর মধ্যে পাসপোর্ট, বিআরটিএ, আইশৃঙ্খলা, বিচারিক ও ভূমি সেবা পেতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে।
এর মধ্যে পাসপোর্টে গ্রামে ৮৮ দশমিক ৬, শহরে ৮১ দশমিক শূন্য, বিআরটিএতে গ্রামে ৮৪ দশমিক শূন্য, শহরে ৮৬ দশমিক ৬, আইনশৃঙ্খলায় গ্রামে ৭৫ দশমিক ১, শহরে ৭৩ দশমিক ৪, বিচারিক সেবায় গ্রামে ৬৩ দশমিক ৪, শহরে ৬০ দশমিক ১, ভূমি সেবা পেতে গ্রামে ৫১ দশমিক ৫, শহরে ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে।
এছাড়াও সেবা পেতে গ্রামে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ ও শহরে ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামের ৫ হাজার ৯০ আর শহরের ৭ হাজার ৮৬ পরিবারকে ঘুষ দিতে হয়েছে।
বিগত বছর পাসপোর্ট, বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সেবা পেতে সর্বোচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ দিতে হয়েছে বলে উঠে এসেছে জরিপের পর্যবেক্ষণে।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা এবং ঘুষের শিকার ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ খানা। এ বছর প্রতিটি পরিবার গড়ে ৫,৬৮০ টাকা ঘুষ/নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে; গড় ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিচারিক সেবা, ভূমি সেবা ও ব্যাংকিং খাতে।
টিআইবি বলছে, বিচারিক সেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় দুর্নীতি ও ঘুষের উচ্চ হার অব্যাহত, যা সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা; অন্যদিকে ভূমি সেবা, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বিআরটিএর মতো সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
সেবা খাতে দুর্নীতি কমাতে সেবা খাতে দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
এছাড়াও সেবা পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করতে হবে যেন সেবাগ্রহীতার সাথে সেবাদাতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রয়োজন না হয় এবং অনলাইনে সেবাগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে যথাযথ প্রচার চালাতে হবে। সব খাতের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস চালু করতে হবে এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন