চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ৩৭ বিশিষ্ট নাগরিক। একইসঙ্গে তারা ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের একাংশসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের অপতথ্য-নির্ভর প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভিত্তিমূলে ষড়যন্ত্রমূলক ধারাবাহিক আঘাতের তীব্র নিন্দা এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ৩৭ নাগরিক বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে মর্মাহত।
উল্লেখ্য, এদিন সাবেক ইসকন নেতা ও সনাতন সম্মিলিত জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুরের পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ভাঙচুরের জেরে আইনজীবী ও উপস্থিত জনতার সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংর্ঘষ হয়। এ সময় সাইফুল ইসলাম নিহত হন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় ১৩ জন পুলিশ সদস্যসহ ৩৭ জন আহত হয়েছে বলেও প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সংহতি জানাই এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। আমরা একই সঙ্গে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন এবং আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত এবং তাদের ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। ঘটনাটি পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয়। এটাকে কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করে এমনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। তা সত্ত্বে ও ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও গনমাধ্যমের একাংশ সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের অপতথ্য-নির্ভর প্রচারের মাধ্যমে একে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উদাহরণ হিসেবে বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভিত্তিমূলে ষড়যন্ত্রমূলক ধারাবাহিক আঘাতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন, তথ্য প্রচারে লিপ্ত তাদের প্রতি অনুরূপ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার অবিলম্বে বন্ধের জোর আহ্বান জানাই।
এতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের সকল সচেতন নাগরিকের পক্ষে শিক্ষার্থী-তরুণ, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের কাছে যেকোনো ধরনের ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচার, অপপ্রচারের ব্যাপারে সজাগ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা এবং সকল ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠীর সংখ্যালঘু সাধারণ নাগরিকদের প্রতি ঐতিহ্যগত সহমর্মিতার আচরণ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর কিংবা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় মানুষের আবেগকে পুঁজি করে কোনো পক্ষ যাতে সহিংসতা তৈরির সুযোগ না পায় সেজন্য আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন- সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, আনু মুহম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী, ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআই-বি, রাশেদা কে চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণস্বাক্ষরতা অভিযান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ড. পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সারা হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিরীন পারভীন হক, মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, নারীপক্ষ, তবারক হোসেইন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ উইমেন্স লইয়ার্স এসোসিয়েশন (বি এন ডব্লিউ এল এ), ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. ফিরদৌস আজীম, অধ্যাপক, ইংরেজি ও মানবিক বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, সামিনা লুৎফা, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শামসুল হুদা, মানবাধিকার কর্মী ও নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি, ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং প্রফেসর, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স, প্রফেসর নায়লা জামান খান, পরিচালক, ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্সেস সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন, রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট, মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, তাসনীম সিরাজ মাহমুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, মো. নুর খান, মানবাধিকার কর্মী, ড. নোভা আহমেদ, অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ব্যারিস্টার শাহাদত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, নাজমুল হুদা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী, হানা শামস আহমেদ, গবেষক ও আদিবাসী অধিকার কর্মী, মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, কোর গ্রুপ সদস্য, সাংগাত ও প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক, স্পার্ক, রোজীনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী, মাইদুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, সমাজতত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন