সমাজে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, নেতিবাচক জেন্ডার ধারণার পরিবর্তন এবং যুব ও যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধন হলো ‘সমতায় তারুণ্য : ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি’ প্রকল্প।
সোমবার (২৫ নভেম্বর ২০২৪) গুলশানের একটি হোটেলে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের আয়োজনে ‘সমতায় তারুণ্য : ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি’ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের আটটি বিভাগে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও জেন্ডার-সংবেদনশীল সাংবাদিকতা প্রসারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং সভাপ্রধান ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেন্স; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম; বাংলাদেশি লেখক, নাট্যকার, নির্মাতা ও সাংবাদিক পলাশ মাহবুব এবং জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান করভি রাকসান্দ।
স্বাগত বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর নিশাত সুলতানা। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ডিরেক্টর নীলিমা ইয়াসমিন যুবদের নিয়ে একটি সেশন পরিচালনা করেন, যেখানে যুব সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের কথা তুলে ধরেন।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টিতে তাদের ক্ষমতায়ন অত্যন্ত জরুরি এবং বর্তমানের সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে।’
কবিতা বোস বলেন, ‘মাতৃগর্ভে থাকতেই একজন কন্যাশিশু বৈষম্যের শিকার হতে শুরু করে। এ ধারা তার পরবর্তী জীবনে অব্যাহত থাকে। সমাজে সব নারী-পুরুষ ও অন্যান্য পরিচয়ের মানুষ যেন সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাস করতে পারে আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’
বাংলাদেশি নাট্যকার, নির্মাতা ও সাংবাদিক পলাশ মাহবুব বলেন, ‘জেন্ডার অসমতা আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, কন্টেন্ট এখনো নারীদের দুর্বল হিসেবে চিত্রায়ন করছে। জেন্ডারবৈষম্য সমাজে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এটি দূরীকরণে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যুব কন্টেন্ট নির্মাতারা নিজেদের জায়গা থেকে ইতিবাচক জেন্ডার সংবেদনশীল কন্টেন্ট তৈরি করে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।’
ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার মনিটরিং ও মূল্যায়নের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। কীভাবে নতুন প্রজন্ম এ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। সমাজে ইতিবাচক জেন্ডার ন্যারেটিভ প্রচারের জন্য যুব সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, কন্টেন্ট নির্মাতাদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন করা প্রয়োজন।’
জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান করভি রাকসান্দ বলেছেন, ‘একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় পর্যায়ে যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোকে টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্থানীয় পর্যায়ের সেসব সংগঠনকে সক্ষম করে তুলছি যাতে তারা নিজেরাই তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।’
সমাজে জেন্ডার সহিংসতা প্রতিরোধ, জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রচলিত নেতিবাচক জেন্ডার ধারণাগুলোর পরিবর্তন এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে যুব ও যুব নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করবে প্রকল্পটি।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় যুব কাউন্সিল, যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, নির্মাতাসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন