ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধানকল্পে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ এবং পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃবাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট (গোবিন্দ প্রামাণিক)। জোটটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই দাবি না মানলে হিন্দু সম্প্রদায় কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এমনকি ভোটকেন্দ্রেও যাবে না।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। ‘সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ ও প্রতিনিধিত্বশীল প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধান ও নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রস্তাব’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষিত, উদার ও নির্লোভ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। আশা করছি, এই সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিটি এবং রাজনৈতিক দলগুলো প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে আসন সংরক্ষণ ও আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থার পুনঃবাস্তবায়ন করবে। সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটাবে।
তিনি জানান, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার পর পাকিস্তানেও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল থাকে। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানে বিধান সভার নির্বাচন হয়। পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থায় পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে ৩০৯ আসনের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ৭২টি আসন (৬৯ জন হিন্দু, ২ জন বৌদ্ধ ও ১ জন খ্রিস্টান) লাভ করে।
পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার রূপরেখার বিষয়ে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের এই মহাসচিব বলেন, দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যা ১২ শতাংশ (হিন্দু-১০, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান-২) অনুপাতে ৩৫০টি আসন হলে ৪২টি আসন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে ৩৮টি হিন্দুদের জন্য, বৌদ্ধদের ৩টি ও খ্রিস্টানদের জন্য ১টি আসন। আর ছয়টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের মধ্যে ৪টি হিন্দু, ২টি বৌদ্ধ সারা দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-আদিবাসী নারীদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। সারা দেশের প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সদস্য মনোনীত করবে।
রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এ দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মনোনয়ন দেয়নি উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যৌথ নির্বাচনের কারণে স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কোনো সংসদেই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি পাঠাতে পারেনি। বিএনপি থেকে মাত্র ১ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ২ থেকে ৩ জন এবং আওয়ামী লীগ থেকে ৬ থেকে ১৫ জন সংসদ সদস্য হতে পেরেছেন। তাই সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
সংখ্যালঘু ইস্যু এখন দেশ-বিদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জানিয়ে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ভারতের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে এমনকি আমেরিকার নির্বাচনেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু তাদের ভোট বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ কেউই স্থায়ী সমাধানের কথা বলছে না। আবার সংখ্যালঘু বিষয়ে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ভীতিকর পরিবেশে বাস করছে। হিন্দু জনসংখ্যা ৩৩ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমেছে।
হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, সংখ্যালঘু হওয়ায় আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, দাবি-দাওয়া শোনা হয় না। কিন্তু আমরা আশা করব, সরকার ও অন্যান্য ধর্মের লোকজন যাতে আমাদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার পাল ও সহসভাপতি দুলাল কুমার মণ্ডল। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি তরুণ কুমার ঘোষ, যুগ্ম মহাসচিব ডা. হেমন্ত দাস, সুমন কুমার শীল, সঞ্জয় ফলিয়া, বিশ্বনাথ মোহন্ত, অ্যাডভোকেট শুভ মজুমদার, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৌমেন্দ্রনাথ কুন্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর কুমার বর্মন, খাগড়াছড়ি জেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, যুব মহাজোটের সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল মধু, প্রধান সমন্বয়কারী সুজন গাইন, অর্থ সম্পাদক যাদব গাইন, ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সজিব কুন্ডু তপু, পল্লব কুমার দাস, সজিব চন্দ্র দাস, হৃদয় চন্দ্র দাস, চন্দন মণ্ডল, রুদ্র সাহা, শুভ্র সরকার সুমন পাল, গোপাল মালাকার, তাপস বিশ্বাস রাজিব প্রমুখ নেতা।
মন্তব্য করুন