আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদে গেল জুলাইয়ে দেশজুড়ে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্র-জনতা। আন্দোলনকারীদের দমনে গণহত্যা, ধরপাকড় করেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে গিয়েও থেমে নেই তিনি। একের পর এক কল রেকর্ড ফাঁস করে দেশের ভিতর অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে জনতার মধ্যে। এর মধ্যেই আলোচনা উঠেছে পরবর্তী নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণ নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেন।
ড. ইউনূস জানান, আগামী নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে বর্তমান সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সরকারপ্রধান জানান, বিএনপি জানায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সরকার দেশের প্রধান একটি দলের মতামতকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।
এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে ড. ইউনূসের আপত্তির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার সরকারের কাজ শুধু রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা। এটি মূলত নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ইচ্ছার দিকে ইঙ্গিত করেই জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। আরেক প্রশ্নের উত্তরে নিজেকে কখনো রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখেন না বলেও জানান ড. ইউনূস। ২০০৭ সালে নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের কথা জিজ্ঞেস করা হলে জানান, সেটা মাত্র ১০ সপ্তাহের জন্য। পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ সময় ৫ আগস্টের ঘটনায় বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারতের উদযাপন করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। পাশাপাশি ভারতে থেকে শেখ হাসিনার দেশের রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়েও আপত্তি তোলেন ড. ইউনূস, তবে তার ভারতে বসবাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলেও জানান। সরকারপ্রধান জানান, হাসিনা বাংলাদেশিদের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিক্ষোভ করতে উৎসাহিত করছেন। যাতে যুক্তরাষ্ট্র বলতে পারে বাংলাদেশ সরকার তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটি আরেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ।
সাক্ষাৎকারে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় দিল্লি যদি হাসিনাকে ফেরত না দেয় তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার খুবই স্বল্পস্থায়ী, তাই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সব দিক এখনই মীমাংসা করা সম্ভব নয়। তবে পরবর্তী কোনো সরকারও এটি সহজে মেনে নেবে না।
মন্তব্য করুন