ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবার গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন তিনজন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে, যারা প্রত্যেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন। শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসক হিসেবেই কাজ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মিলেছে। এসব বদলি বা পদায়নের পর বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসরদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্বাচিপপন্থি চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে আওয়মীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) জোগসাজশ রয়েছে।
জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হাসিবা মুনতাহাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন পদে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন মাহবুবুর রহমান রাজীবকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের বদলি করা হয়।
একই প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওএসডি মেডিকেল অফিসার মো. আশিকুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেসিডেন্ট ফিজিসিয়ান পদে এবং মো. হাফিজুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার থেকে আবাসিক সার্জন পদে পদায়ন করা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালে পদায়ন হওয়া তিনজন প্রত্যাক্ষভাবে স্বাচিপের কর্মী। তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও স্বাচিপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মসূচির প্রমাণ রয়েছে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাদের অপসারণের দাবিতে ঢামেক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে ব্যানারও ঝুলিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকরা।
এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের স্বাচিপপন্থি চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মুসাব্বিরকে বদলির আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাকে হেমাটোলজি বিভাগের আরপি হিসেবে পদায়ন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে নাজিয়া নওরিন নামে এক নারী চিকিৎসককে পদায়নের আদেশ জারি করা হয়।
অভিযোগ আছে, নাজিয়া নওরিনের স্বামীও একজন চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রিজওয়ানু রহমান কালবেলাকে বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় গতি ফিরিয়ে আনতে সারা দেশের বিভিন্ন পদে চিকিৎসকদের বদলি বা পদায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভুলবশত ফ্যাসিবাদের দোসর কারও পদায়ন হয়ে থাকলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক ও আমরা সবাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
মন্তব্য করুন