গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত আর বিচারে বর্তমান সরকারের সাহস আর আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, গুম-অপহরণের সাথে জড়িতদের বিচার করা কঠিন। কারণ ফ্যাসিবাদের শেকড় গভীরে ছড়িয়ে আছে। ১৫ বছরের শাসনকে কয়েক সপ্তাহে মোকাবিলা করা খুব কঠিন। এমনকি কমিশনের জন্যও কঠিন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে ‘এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিরেন্স’ (এএফএডি) এর অষ্টম কংগ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব। এটা ম্যাটার করে না আমরা কোন পজিশনে আছি। আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে কোনো সন্দেহ রাখবেন না, শুধু এটুকু দাবি করব। আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের আন্তরিকতা আর সাহসের কোনো অভাব নাই। আমরা এটার শেষ দেখে ছাড়ব।
খুন করার চেয়েও কাউকে গুম করাকে আরও জঘন্য অপরাধ বলে মনে করেন আসিফ নজরুল। বলেন, একটা মানুষ যখন মারা যায়, আপনি জানেন তার ডেডবডি আছে। আর, এটা কী দুঃসহ ব্যথা! আপনি জানেন না বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টার কাছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানের দাবি জানান তাদের স্বজনরা। এ ব্যাপারে আগের সরকার আশ্বাস দিলেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান তারা। গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারের এক সদস্য কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, অন্তত একটা সন্ধান দিন আমাদের। আমাদের সাহায্য করুন।
দশ বছর ধরে সন্তানকে খোঁজার বর্ণনা দিয়ে রওশন আরা বলেন, আমার ছেলেকে রাতের অন্ধকারে গুম করা হয়েছে। কত জায়গায় খুঁজছি, কোথাও পাইনি। ফিরে পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে এখনো খুঁজছি। পাঁচ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে ফেলা নাসরিন জাহান জানান, অন্ততপক্ষে আমাদের একটা সন্ধান দিন যে আছে বা নাই। নামাজের বিছানায় বসে যাতে অন্তত কিছু বলতে পারি। আমরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
পরে আসিফ নজরুল বলেন, এই সরকার (অন্তর্বর্তী) সব সরকারের মতো না। আমরা সবাই আমাদের পেশায় প্রতিষ্ঠিত। আমাদের জীবনের একমাত্র সম্পত্তি হচ্ছে সুনাম। ফলে কোনোভাবেই আগের সরকারের পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তির প্রশ্নই আসে না। আমাদের অঙ্গীকার অবশ্যই আগের চেয়ে বেশি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কোনো সরকার কমিশন গঠন করেনি, আমরা করেছি।
তিনি বলেন, আপনারা ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, আমিও তো মানুষ। আমারও তো সন্তান আছে। আমার বাচ্চাটা যদি গুম থাকে, আমার কী হবে? আমি যদি গুম হই, আমার স্ত্রীর কী হবে? আমি যদি গুম হই, আমার মায়ের কী অবস্থা হবে? এগুলো চিন্তা করলে মনে হয় যে, যারা এসব গুমের নির্দেশ দেয়, যারা গুম করে, আমার মনে হয় যে তাদের পরিবারগুলোতে আমরা এসব পরিবারের সামনে নিয়ে আসি। আমি অনুরোধ করব, যদি কারও বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ প্রমাণ হয়, ‘এসব বদমাইশের’ পরিবারকে এখানে নিয়ে আসি। তারা নিজের চোখে দেখুক, তাদের পিতা, তাদের সন্তান, তাদের ভাইয়েরা কী করেছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বর্তমান সরকার গুম হওয়া মানুষের পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। ন্যায়বিচার পাওয়া সবার অগ্রাধিকার। শুধু গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবারের জন্য নয়। বরং গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের শিকার প্রত্যেকের জন্যেই এটি কার্যকর।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আইন উপদেষ্টার কাছে গুমের মতো অপরাধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের অনুরোধ করছি। যাতে এ ধরনের অপরাধ কেউ না করতে পারে।
মন্তব্য করুন