তরুণ প্রজন্মকে তামাকের বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছেন তামাকবিরোধী তরুণ সমাজ এবং তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে ২ হাজার তরুণ-তরুণী এবং তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের ২১ জন সদস্যের পক্ষ থেকে খোলা চিঠির মাধ্যমে এ দাবিগুলো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রী।
খোলা চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাবিত ৬ সংশোধনীগুলো তুলে ধরেন তারা। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো- সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা, তামাকজাতদ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যে কোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাতদ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। প্রস্তাবিত এই সংশোধনী গুলো দ্রুত পাস হলে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার অর্থাৎ দৈনিক ৪৪২ জন মানুষের প্রাণ রক্ষা হবে।
এ ছাড়া সিগারেট ব্যবসায়ীদের নানান রকম অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হওয়ার আহ্বানও জানান তারা। তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধার্থে প্রচারণা চালায় যে, সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হলে রাজস্ব কমে যাবে। কিন্তু সঠিক চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। এমন অপপ্রচার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে মোটেও সমর্থন করে না। বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক হতে রাজস্ব ছিলো ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-৬ এ রাজস্ব আদায় হয় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন হয়, সে বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস ও ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করার পর গত ১৮ বছরে তামাক থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ গুণ। একইসঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে তামাক ব্যবহার প্রায় ১৮ শতাংশ কমেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমবে।
অপরদিকে তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী বৃহৎ দুটি কোম্পানি বিএটি ও জেটিআই-এর কর্মচারী সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ২ হাজারের নিচে। অথচ তারা লক্ষ শ্রমিক কাজ হারাবে বলে দাবি করছে। এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জন্য খোলা চিঠির মাধ্যমে এ দাবি জানান তারা।
মন্তব্য করুন