আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহব্যাপী জাতিসংঘের আয়োজনে বিশ্বজলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন কপের (কনফারেন্স অব পার্টিজ) ২৯তম আসর।
রোববার (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনটি শেষ হবে আগামী ২২ নভেম্বর।
দেশের পরিবর্তীত প্রেক্ষাপটে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে আজ আজারবাইজানের উদ্দেশ্য রওনা হবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এছাড়াও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের একটি দলের যাওয়ার কথা রয়েছে।
উন্নত বিশ্ব শিল্পায়নের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বন্যা, খড়ার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিরূপণ করে এমন অনেক পরিসংখ্যানে ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায জীবাশ্ম জ্বালানী কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধে নানামুখী দাবি উঠছে। জলবায়ুর ওপর শিল্পের প্রভাব কমাতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া, রিনিওয়েবল এনার্জিতে বিনিয়োগসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তির আলোকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
বিগত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ অনুযায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলো তহবিল দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও, প্যারিস চুক্তিতে এটি বাধ্যতামূলক না থাকায় উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়ন পেতে ক্রমেই অসুবিধায় পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) ২০১৫ সাল থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে মাত্র সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে, যা মাত্র ২-৩ শতাংশ। ২০২০-২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৭১০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এবারের সম্মেলন থেকে জলবায়ু অর্থায়নে সুস্পষ্ট অগ্রগতি ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হবে, যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশ তাদের পরিকল্পনা উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করছে বায়ুণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, কপের ২৯তম আসরে বাংলাদেশের দাবি স্পষ্ট। এই সম্মেলনে আমরা অভিযোজন, প্রশমন এবং ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের জন্য জোরালো দাবি জানাব। এ ছাড়া প্যারিস চুক্তিতে উন্নত দেশগুলো প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল। গত ৯ বছরে এর পরিমাণ দাড়িয়েছে ৯০০ বিলিয়ন ডলার। সেটি আদায় করা এবং ২০৩০ সাল থেকে বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের দাবি জানাবো। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ বন্যা, খড়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ তাদেরকেই (উন্নত দেশগুলোকে) দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা বর্তমানে পরিবেশবিষয়ক নীতিনির্ধারণ করছে ১০০ বছর আগে তারাই দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে ছিল। এই দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ দূষণগুলোর ফলাফল হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একই মুদ্রার দুটো পিঠ, স্থানীয় পর্যায়ে বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধানসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জলবায়ু সম্মেলনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিল্পবিপ্লব থেকেই পৃথিবীর তাপমাত্রা যে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের উপায় রয়েছে কয়েকটা সেগুলা হলো, নবায়নযোগ্য শক্তি এর দিকে যাওয়া, টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করা, সেটার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো এবং বাস্তবায়ন শুরু করা, গ্রিন ইকোনমির দিকে যাওয়া এবং নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাতে করে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে একবিংশ শতাব্দী শেষে পৃথিবীর বুক থেকে প্রায় অর্ধশত দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন