সারা দেশে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের স্বপদে বহাল প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)- এ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানান তারা। এ সময় দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র উপজেলা চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন- ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনারা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। শত ব্যস্ততার পরেও আপনারা আমাদের ডাকে হাজির হয়েছেন। আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্বতন্ত্রভাবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষভাবে ৪ ধাপে মেয়াদ উত্তীর্ণ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনেকগুলো উপজেলার মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়াতে নির্বাচন হয়নি। ওই নির্বাচনে দলীয় কোনো মনোগ্রাম ও মনোনয়ন ছিল না। ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিজয় অর্জন করে শপথ গ্রহণ করি। পরে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম শুরু করি। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভাসহ রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসিতেছি।
গত ১৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-১ শাখার আদেশ অনুযায়ী সারা দেশের ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। যা খুবই দুঃখজনক।
তারা বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা মাঠ পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। ইচ্ছা করলেই জনগণের সঙ্গে তাদের গভীরতম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয় না। ফলে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম রাষ্ট্র ও সরকার কর্তৃক নির্দেশিত সকল আদেশ বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ ও হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যা ইতোমধ্যে জাতি পর্যবেক্ষণ করছে। তৃণমূল জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে উপজেলা পরিষদ। আমরা নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা দলীয় কাঠামোর বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। এই নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক প্রতীক ও রাজনৈতিক দলের মনোগ্রাম সংবলিত কোনো ছবি ছিল না। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, নির্দলীয়ভাবে একটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়। যা তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে।
গত ৪ নভেম্বর উপদেষ্টা ও সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাবর আমাদের পুনঃবহালের জন্য আবেদন করি। আজকে আপনাদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করব, একটি এখান থেকে উপজেলার সকাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, উপজেলার আইনশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, নাশকতাসহ সব নাগরিকদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়।
তারা আরও বলেন, সারা দেশে বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ও পরিষদ বহাল তবিয়তে আছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপি নেতা শপথ গ্রহণ করে মেয়র হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা হতবাক হয়েছি। এই বিষয়গুলো বৈষম্যবিরোধী নয় কী? আমরা আজকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই, বিগত ৬ষ্ঠ ধাপের উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হয়। জনগণের স্বত্বঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। যা তৎকালীন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। কোথাও যদি কেউ কোনো অনিয়ম বা পেশিশক্তির ব্যবহার, ভোট ডাকাতি করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে থাকে তাহলে সেইগুলো চিহ্নিত করে ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগভাবে সেইসব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অপসারণ করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এ অবস্থায়, আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে এবং তৃণমূল জনগণের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সকল আদেশ নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে সফল বাস্তবায়নের স্বার্থে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত দেশের সকল উপজেলা চেয়ারম্যানদের পুনরায় স্বপদে বহাল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- চাঁপাইনবয়াবগঞ্জ জেলার গণস্থাপুর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আশরাফ হোসেন (আলিম), নাটোর বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. এ এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন (মানিক), কক্সবাজার মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জয়নাম আবেদীন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন