রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তাঅধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।
শনিবার (৯ নভেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি অয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
মহাপরিচালক বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কিছু দ্রব্যাদির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুরসহ রোজায় অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানিতে এলসি মার্জিন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে রোজায় নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। ঢাকা সম্প্রসারিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজার মাত্র এই দু’টি স্থানে ডিমের আড়ৎ রয়েছে।
ভোক্তাদের সুবিধার্থে রোববার থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৬টি ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৭টি সাব সেন্টারে সরাসরি ডিম বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রান্তিক খামারিরা কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মুরগীর বাচ্চা, ফিড এবং ভ্যাকসিনাদি গ্রহণের যে রীতি গড়ে উঠেছিল তা থেকে খামারিদের মুক্ত করে উৎপাদন ও বিপণন আরো সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে ভোক্তা ও খামারিরা উপকৃত হবে। জনগণের কল্যাণের জন্য জনগণের মালিকানাধীন রাষ্ট্রে জনগণের পক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখতিয়ার ও ক্ষমতা সরকারের আছে। তাই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে এতে শঙ্কায় পড়ার কোনো কারণ নাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সাধারণ মানুষ ভোট প্রদানের অধিকারের সাথে সাথে ভাতের অধিকারও নিশ্চিত করতে চায়। বিগত সরকার ভোট ও ভাত কোনটারই অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। মানুষ না পেরেছে ভোট দিতে, না পেরেছে দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকল থেকে বাঁচতে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর শুল্ক কমানোর সিন্ধান্তে এনবিআরকে স্বাগত জানাই।
একই সাথে আশাকরি আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে চিনি, গম, ভোজ্যতেলসহ ৫/৬টি পণ্যের ওপর সরকার এলসি মার্জিন উঠিয়ে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। ৬/৭টি কর্পোরেট কোম্পানীর কাছে বন্দি আমরা। কর্পোরেট কোম্পানীগুলো যেন বোয়াল মাছ, গজার মাছের মতো। সবই খেয়ে ফেলতে চায়। ছোট বড় পণ্য থেকে শুরু করে মিডিয়া, সংবাদপত্র সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরণের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযোগ প্রদান করা উচিত।
কিরণ আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন পেশা ও সেক্টরে সিন্ডিকেট থাকলেও জনগণের কোন সিন্ডিকেট নেই। জনগণের সিন্ডিকেট জেগে উঠলে এসব কালো বাজারীরা পালিয়ে যাবে। যেভাবে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে জনগণ যখন জেগে উঠেছিল, তখন স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল। তাই জনগণকে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। ভয়েস রেইস করতে হবে। তাহলে কালোবাজারী পতিত সরকারের মতো পালিয়ে যাবে।
আমাদের আমদানী নীতিতে অনেক ভুল আছে। সঠিক সময়ে চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পণ্য আমদানীতে ব্যাপক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। বাণিজ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি বিদ্যমান। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্যাট-ট্যাক্স সহনশীল করে উন্মুক্ত আমদানী নিশ্চিত করা উচিত। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পূর্বের আমদানী নীতিতে অনেক সংস্কার করছে। ছাত্র-জনতার অর্জিত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দ্রব্যমূল্য কেউ যাতে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “বিগত সরকার সৃষ্ট সিন্ডিকেটই বাজার অস্থিরতার জন্য দায়ী” শীর্ষক ছায়া সংসদে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক ইকবাল আহসান, সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন