তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের প্রয়োজনীয়তায় তামাক নিয়ন্ত্রণে ৬টি প্রস্তাবনা করা হয়েছে। অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সভাকক্ষে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে আশু প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় এ প্রস্তাবনা করা হয়। ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়র-ডব়্প-এর কারিগরি সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, সিটিএফকে, বাংলাদেশ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডব়্প-এর উপদেষ্টা মো. আজহার আলী তালুকদার এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব়্প-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীতে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়াটি পাশের জন্য সরকারের কাছে প্রেরণের অগ্রগতির বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ডব়্প-এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরৎ পাঠানো হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স আকারে পাশের জন্য সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে এবং তা বিবেচনাধীন আছে।
‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন এখন অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করবে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পরিমার্জিত খসড়াটি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করবে। এই অগ্রগতিগুলোকে অর্ন্তবর্তী সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ড. মামুন আহমেদ বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন একটা জায়গায় দেখতে চাই, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এবং সোসাইটির মধ্যকার একটি মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ভাইব্র্যান্ট একটা প্রজন্ম তৈরি হবে। সেই বিষয়টির জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। আমরা ছাত্র থাকা অবস্থায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার এবং অনুষ্ঠান হত। এই সময়টাতে আমরা বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করলাম যে, সেসব অনুষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরাই কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে মৃত্যুর আয়োজন করে মুখে শুধু না বলার নামান্তর।
তিনি বলেন, তামাক বা মাদক স্বাস্থ্যগত, পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তামাক বা মাদকদ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তামাক শিল্প থেকে আয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উমামা ফাতেমা বলেন, তামাকের ব্যবহার বন্ধে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। তামাক উৎপাদন, ক্রয় বিক্রয় এবং ব্যবহার শুধু আইন দিয়েই বন্ধ করা যাবে বলে আমার মনে হয় না।
আব্দুল কাদের বলেন, তামাক বা মাদক উৎপাদন ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বা আইন সংশোধন বা এর বাস্তবায়নের পাশাপাশি তামাক জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধির মূল কারণটা বের করতে হবে। সেই অনুযায়ী ধরে ধরে কাজ করতে হবে।
আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, তামাকজাত দ্রব্যসেবন বাংলাদেশে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে যারা তামাকজাত দ্রব্যসেবন করছে কিংবা করছে না উভয়েই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি পরিবেশের। তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় আইন এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
মন্তব্য করুন