বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদ্রায়িক হামলা ও সংখ্যালঘু নিপীড়নসহ অন্যান্য সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে এর সম্ভাব্য সমাধান নির্ধারণের জন্য ‘সংখ্যালঘু অন্তর্ভুক্তি প্রশ্ন : সংকট ও সমাধান’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে ধারণ করে ‘একতার বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে বুধবার (০৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিকেলে এ গোল টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
একতার বাংলাদেশের আহ্বায়ক প্লাবন তারিকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তাহমিদ মুদাচ্ছিরের সঞ্চলনায় বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোস শর্মা বলেন, গত ৫৩ বছর ইতিহাস বৈষম্যের ইতিহাস, বিচারহীনতার ইতিহাস। অনেকে মনে করেন সব হিন্দু আওয়ামী লীগে ভোট দেয়, তবে এটা সত্য নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬টি কমিশন গঠন করেছে, এখানে সংখ্যালঘুদের নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি।
বৌদ্ধ নেতা সুনন্দ প্রিয় ভিক্ষু বলেন, দেশ কেমন চলছে তার মানদণ্ড নির্ণিত হয় সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভালো আছে কিনা। কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভালো নেই। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গাতে তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ’৭২ এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি থেকে সরে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা হারিয়ে ফেলে।
রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিনিধি অরুণ মহারাজ বলেন, আমরা বৈষম্যের নিরসন চাচ্ছি, কিন্তু কোনো ধর্মকে যদি রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিই তাহলে তো আমরা আবার বৈষম্যকেই ডেকে আনছি। বিবাদ, মতিবোরোধ নয় বরং পরস্পরের ভাব মিনিময় ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের রাফিদ বলেন, বিগত সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে তারা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। দেশের ভিতরে এক্সট্রিম ভিউকে কমাতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারই দীর্ঘদিন সংখ্যালঘু সমস্যা জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছে।
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেঘ মল্লার বসু বলেন, সংখ্যালঘু সংকট ১৯৭৫ নয় বরং ১৯৭২ থেকে শুরু হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়েও কথা বলতে হবে। অবাঙালি হিন্দুদের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আমাদের আলোচনা করতে হবে। হোমোজেনাস আইডেন্টিটি নয় বরং রাষ্ট্রকে বহুত্বকে ধারণ করতে পারতে হবে।
নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল আদিব বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। গত ১৫ বছর লীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও সবচে বড় ভিক্টিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আমাদের সংখ্যালঘুর আলোচনাটা আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে করা প্রয়োজন। তিনটা মূল্যবোধ- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক মূল্যবোধ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ ছিলো। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাথে প্রথম বেইমানি করে আওয়ামী লীগ, যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ সময়ের লড়াই-সংগ্রামের একতা ভেঙেছে তারা।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ইসলাম ধর্ম প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য তার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। আমরা বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
হিন্দু মহাজোটের সাধরণ সম্পাদক গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই হিন্দুদের কুক্ষিগত করে রাজনীতি করে।
এসময় বৌদ্ধ নেতা চারুত্তম বড়ুয়া, নাবিকের ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দীন, নাগরিক কমিটির আরিফুল আদিব, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের নেতা রেভ মার্টিন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি দে, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই এর রায়হান উদ্দিনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন