হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে থেকে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে গত ১০ অক্টোবর ঘরে বসেই আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অথচ ই-পাসপোর্ট আবেদনের নিয়মে আছে, সবকিছু ঘরে বসে করতে পারলেও নির্ধারিত তারিখে অসুস্থ ও শারীরিকভাবে অক্ষমরা ছাড়া আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিতে আবেদনকারীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দৈনিক দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, রংপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলার আসামি শিরীন শারমিন চৌধুরী। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থেকে তিনি গত ৩ অক্টোবর তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইনসহ ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ ই-পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেন। পরে সেখানে না গিয়ে গত ১০ অক্টোবর ঘরে বসে তাদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিয়েছেন।
শিরীন শারমিন চৌধুরীর পাসপোর্টের আবেদন করার বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার আছে। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অর্ডার, ১৯৭৩-এ এই অধিকার দেওয়া আছে।
এ বিষয়ে জানতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানুর মুঠোফোনে কল করা করা হলে সেটি রিসিভ হয়নি।
পাসপোর্টের আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে শিরীন শারমিন ও তার স্বামী ইশতিয়াক হোসাইন উল্লেখ করেছেন রাজধানীর ধানমন্ডির ১৬ নম্বর সড়কের একটি বাসার ৪-ই ফ্ল্যাট। গত রোববার সেই বাসায় গিয়ে দুজনের একজনকেও পাওয়া যায়নি।
বাসাটির রক্ষণাবেক্ষণকারী মো. শাহাবুদ্দীন বলেন, আমি এ বাসায় কাজ শুরুর পর থেকে তাদের (শিরীন শারমিন ও সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন) এখানে এক দিনও আসতে দেখিনি। তারা এখানে থাকেন না। তারা কোথায় আছেন, এটাও জানি না।
অক্টোবরের ৩-১০ তারিখের মধ্যে পাসপোর্ট অফিস থেকে কোনো লোকজন বাসাটিতে এসেছিল কি না এ প্রশ্নের জবাবে শাহাবুদ্দীন বলেন, না, এমন কেউ আসেননি।
এ বিষয়ে জানতে শিরীন শারমিন চৌধুরী ও তার স্বামীর আবেদনে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ) মো. ফিরোজ সরকার বলেন, শারীরিকভাবে অক্ষম ও ঘরের বাইরে বের হলে তার প্রাণ যাওয়ার হুমকি আছে এরকম কিছু বিষয় ছাড়া কেউই ঘরে বসে পাসপোর্টের জন্য আঙুলের ছাপ দিতে পারে না। আমি যতটুকু জানি, কেউ যদি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এ সুবিধা নেয় তাতে আইনের ব্যত্যয় হয়।
কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়া এবং সাবেক সরকারের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও আমলাদের নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে আলাদা কোনো চিন্তাভাবনা বা নির্দেশনার উদ্যোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের চিন্তাভাবনার বিষয়ে বলার এখতিয়ার আমি রাখি না। এগুলো বলবেন সচিব স্যার কিংবা উপদেষ্টা মহোদয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের কার্যালয়ে কয়েক দফা চেষ্টা করেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাবেক এ স্পিকারের পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই এমনটা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি দায়িত্বে যত দিন ছিলেন, তত দিন তার লাল পাসপোর্ট (কূটনৈতিক) ছিল। এখন তার সাধারণ পাসপোর্ট হবে এটা স্বাভাবিক। মামলা থাকলেও পাসপোর্ট করা যাবে।
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী সাবেক স্বৈরাচারের আমলের স্পিকার এবং হত্যা মামলার আসামি। পাসপোর্ট পাওয়া তার নাগরিক অধিকার হলেও বর্তমানে দেশে একটা বিশেষ অবস্থা চলছে। এ সময়ে তাদের পাসপোর্ট করতে দেওয়াটা সন্দেহজনক। তিনি তো বিদেশেও চলে যেতে পারেন।
এদিকে শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তদন্ত করছে রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এ বিষয়ে আরএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম) শিবলী কায়সার বলেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক আসামি। পুলিশ তাকে খুঁজছে, তার সন্ধান পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে।
মন্তব্য করুন