ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই আইনটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে প্রতিস্থাপিত হবে। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এই আইনের বিধানগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
সোমবার (৭ আগস্ট) প্রেস বিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে যাচ্ছে। আইনটি কীভাবে আরোপ হচ্ছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা করছে। এ সম্পর্কে কোনো মূল্যায়ন আছে কি না এবং যুক্তরাষ্ট্র কী ভাবছে, আপনি কী মনে করছেন?
জবাবে মিলার বলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আগেও বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি গ্রেপ্তার, আটক ও সমালোচকে দমাতে ব্যবহার করা হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘদিনের আইন সংস্কারের প্রতিশ্রুতিকে আমরা স্বাগত জানাই এবং বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করি যেন সব অংশীদারকে নতুন খসড়া সাইবার সিকিউরিটি আইন পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়া যায় এবং এর বিধানগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সোমবার (৭ আগস্ট) সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক দপ্তর থেকে এক টুইটবার্তায় আইন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগীরা কঠোর এই আইনকে ভিন্নমত দমন এবং অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন আইনমন্ত্রী
প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটি বলে, বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়।
নতুন আইনটি পাস হওয়ার আগে সব অংশীদার যেন প্রস্তাবিত এই আইন খুঁটিয়ে দেখে এবং এটা নিয়ে মতামত প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়। এর বিধানগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
কেবল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারচর্চার কারণে যাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, যে ধারাগুলোতে সমস্যা ছিল সেগুলো সংশোধন করে সন্নিবেশিত হবে সাইবার নিরাপত্তা আইনে।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬-সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়।
এরপর থেকে সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল।
মন্তব্য করুন