পিতৃ-মাতৃহীন অসহায় শিশুর প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ অনভিপ্রেত ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মনে করে, এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন। এ ঘটনায় কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
সোমবার (৪ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর্মী নির্যাতন একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকার কারণে নির্যাতনে জড়িতদের সাজা হয় না বললেই চলে। ফলে, সমাজে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচারহীনতার এক সংস্কৃতি বহমান। কোনো ঘটনায় যদি মামলা হয় তখন অনেকক্ষেত্রে অর্থের দাপট, পেশিশক্তি এবং রাজনৈতিক দাপটের কাছে পরাস্ত হতে হয় দুর্বলদের। ফলে, শুরুতে বা মাঝপথে আইনবহির্ভূত সমঝোতা লক্ষ্য করা যায়।
কমিশন কর্তৃক সাম্প্রতিককালে প্রস্তাবিত গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনটি সরকার কর্তৃক পাস করার দাবিসহ এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি কমিশনকে অবহিত করার জন্য পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রামকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর চিকিৎসাসেবা ও কাউন্সিলিংসহ পুনর্বাসন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
একাত্তর টেলিভিশনে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনায় জানা যায় যে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রিয়া মনি (১৩) নামক এক গৃহকর্মী নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার ১৩ বছরের এই গৃহকর্মীকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানার পুলিশ একাত্তর টেলিভিশনের সহযোগিতায় শহরের অক্সিজেন মোড় এলাকার রৌফাবাদ কলোনি থেকে উদ্ধার করেছে। তার মা-বাবা, কেউই বেঁচে নেই।
সংবাদ মতে, সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর কখনও সামান্য ভুলে বা কখনও বিনা কারণে শরীরে গরম লোহার সেঁক দেওয়াসহ বর্বর নির্যাতনের চিহ্ন মিলেছে রিয়া মনির সারা শরীরে। তার সঙ্গে কী ধরনের অমানবিক আচরণ এবং অত্যাচার করা হতো সে সবের লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে রিয়া মনির কথায়।
অপরদিকে অভিযুক্ত নীলিমা শামীম একজন কবি। উদ্ধার অভিযানের খবর জানতে পেরে জড়ো হওয়া এলাকাবাসীও হতবাক। নির্যাতনের এসব তথ্য অনেকে এমনকি নির্যাতনকারীর পুত্রবধূ জানলেও ভয়ে মুখ খুলত না। উদ্ধার করে থানায় আনার পর রিয়া জানায়, নির্যাতনের কারণে পালিয়ে গেলেও তাকে আবার ধরে আনা হয়। মায়ের মৃত্যু হলেও তাকে দেখতে যেতে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য রিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় বায়োজিদ বোস্তামি থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
মন্তব্য করুন