ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রদানকারী (এনটিটিএন) এবং সেই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলোর একে অপরের প্রতি দোষারোপের কারণে দেশজুড়ে এখনো ঝুলন্ত তার রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আর সেবা গ্রহীতাদের মধ্যেকার ‘ব্লেইম গেম’-এর কারণে দেশজুড়ে ঝুলন্ত তার রয়ে গেছে। এনটিটিএন অপারেটররা বলবে ভোক্তার দোরগোড়ায় ফাইবার পৌঁছানো হয়েছে কিন্তু আইএসপি সেটি ব্যবহার করছে না। আইএসপি বলবে অনেকক্ষেত্রে এনটিটিএন ব্যয়বহুল। এই কারণেই এখনো ‘ওভার হেডেড ওয়্যার’ (ঝুলন্ত তার) রয়ে গেছে।
সোমবার (০৪ নভেম্বর) টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এনটিটিএন অপারেটর সামিটের (সামিট কমিউনিকেশন্স) ১৫ শতাংশ আর ফাইবার আট হোমের ২৭ ফাইবার মাটির নিচে। বাকিসব ঝুলন্ত তার। এনটিটিএন অপারেটরদের অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাদের ফাইবার সম্প্রসারণে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ সরকার দিয়েছে। ‘ইনফো সরকার’ এবং ‘হাওর বাওর’ প্রকল্পের অর্থ হয়েছে আগের সরকারও কিছু কাজ করেছে এনটিটিএন নিয়ে। তবুও এনটিটিএনগুলো পারেনি। মোবাইল ইন্টারনেট সাশ্রয়ী না বরং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সাশ্রয়ী উল্লেখ করে দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড সেবার বিস্তার সব সরকারের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
টেলিযোগাযোগ খাতের আইনে সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এমন আইন করব যেখানে সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকবে। কেউ যদি দুর্বল থাকে তাকে আইনের মাধ্যমে সাপোর্ট দেব। আর কেউ যদি বেশি বড় হয়ে যায় বা ‘জায়ান্ট’ হয়ে যায় তাহলে তাকেও এই আইনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করবো। তার পাখা কেঁটে দেবো, আমরা করবো এটা। টেলিযোগাযোগ খাতে এতদিন যে অনিয়ম হয়েছে সেটি সম্ভব হয়েছে বিটিআরসির ক্ষমতা হ্রাসের কারণে। বিটিআরসিকে রেফারিং এজেন্সি হিসেবে বানিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি’র সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী। সংগঠনের সভাপতি সমীর কুমার দে-এর সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি মিলে সারাদেশে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে। আর এ নেটওয়ার্কের ফলে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেটভিত্তিক সকল সেবা ছড়িয়ে পড়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার বলেছেন, অপতথ্যের অজুহাতে আমরা কোনোভাবেই ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারি না। এজন্য আইন করা দরকার। টেলিকমের অবকাঠামো, কন্টেন্ট এবং প্রতিযোগিতা তিনটি বিষয় নিয়ে পলিসি পর্যালোচনা করে ঢেলে সাজানো উচিত।
এসময় অন্যদের মধ্যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার, টেলিটকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মাবুদ চৌধুরী, ফাইবার অ্যাট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক সিদ্দিকী, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের চিফ নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট (সিএনএ) ফররুখ ইমতিয়াজ, রবি আজিয়েটার করপোর্টে অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহদ আলম, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান এমটব মহাসচিব মো. জুলফিকার, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন